স্টাফ রিপোর্টার
পৌরসভার স্ট্যান্ড ছাড়া সড়ক কিংবা মহাসড়কে যানবাহন থেকে টোল আদায় না করার নির্দেশনা থাকলেও চাঁদপুর জেলাজুড়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে তা’ আদায় করা হচ্ছে। জেলার প্রত্যেকটি পৌরসভারই একই চিত্র। স্ট্যান্ড ছাড়া ৪ থেকে ৫ স্থান থেকে প্রতিদিন টোল আদায় চলছে। বিশেষ করে এই অনিয়মের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোবাইক চালকরা। পৌরসভার পক্ষ থেকে এসব বাহনের চালকদের কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে টোল আদায় এবং হয়রানি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এসব বাহনের জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড।
সারাদেশে টোল আদায়ের এই অনিয়মের বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পৌরসভার সব মেয়র বরাবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পৌর-শাখা থেকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়- গত ২১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের দায়েরকৃত রিটের আদেশের আলোকে টার্মিনাল ছাড়া কোন সড়ক কিংবা মহাসড়কে টোল আদায় না করা এবং এই আদেশ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
সম্প্রতি চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, কচুয়া, মতলব দক্ষিণ, মতলব উত্তরের ছেঙ্গারচর ও ফরিদগঞ্জ পৌরসভা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভাগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোবাইকের জন্য কোন নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নেই। যে কারণে পৌরসভা এলাকার প্রবেশমুখগুলোতে পৌরসভা কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদারের লোকজন টোল উত্তোলন করছেন। কোন কোন পৌরসভায় ৪ থেকে ৫ স্থানে আদায় হচ্ছে এসব টোল। টোল আদায় করার ক্ষেত্রে টাকার অংক ভিন্ন। ১০, ১৫ ও ২০ টাকা করে আদায় হচ্ছে টোল।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বাজার এলাকার অস্থায়ী স্ট্যান্ডের অটোরিকশা চালক রাব্বি ও সুজন জানান, হাজীগঞ্জ পৌরসভায় অটোরিকশার জন্য কোন স্ট্যান্ড নেই। কিন্তু পৌরসভার ৫ স্থানে টোল আদায় করা হয়। সড়কের মাঝখানে যাত্রীসহ গাড়ি গতিরোধ করে আদায় করা হয় টোল। পৌরসভার পক্ষ থেকে চালকদের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। কোন পাবলিক টয়লেটও নেই।
চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার-পুরাণ বাজার ব্রিজের নতুন বাজার অংশে, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকা, ওয়ারলেস ও বাবুরহাট এলাকায় আদায় করা হয় পৌরসভার টোল। নির্দিষ্ট কোন স্ট্যান্ড নেই। যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং করে রাখায় শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
শহরের বাবুরহাট এলাকার অটোরিকশা চালক লতিফ ও মিজানুর রহমান জানান, স্ট্যান্ড না থাকায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গাড়ি রাখলেই ট্রাফিক এসে মারধর করে। আমাদের দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। কিন্তু সব পৌরসভায়ই টোল আদায় করছে। আমরা চাই নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড তৈরী করে আমাদের টয়লেট সুবিধাসহ পৌরসভা থেকে ব্যবস্থা করা হউক।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী মনির জানান, স্থানীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি আমরা পেয়েছি। কিন্তু টোল আদায় বাংলা সন হিসেবে ঠিকাদারের মেয়াদ চৈত্র মাস পর্যন্ত। এরপর পৌরসভার নির্ধারিত কমিটি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
মতলব চেঙ্গারচর পৌরসভা প্রশাসক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইমরান খাঁন জানান, তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়ে অবগত নন। কিভাবে টোল আদায় হচ্ছে বিষয়টি সময় নিয়ে খোঁজ-খবর নিবেন।
মতলব দক্ষিণ পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন লিটন জানান, স্থানীয় সরকার যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা আমরা পেয়েছি। নোটিশের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের পৌরসভার আয় বন্ধ হয়ে যাবে।
কচুয়া পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন বলেন, আমরা ইজরা দিয়েছি স্ট্যান্ড থেকে টোল আদায়ের জন্য। কিন্তু তারা যদি অন্যস্থান থেকে আদায় করে সেটা অবৈধ। এ বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ জানান, স্থানীয় সরকার থেকে বিজ্ঞপ্তি পেয়েছি। কিন্তু টোল আদায় বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
১৫ ডিসেম্বর, ২০২২।