এখনো সব নতুন বই না আসায়
ইলশেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরের প্রথমদিন নামেমাত্র বই উৎসব হলেও এখনো বই হাতে পায়নি সব শিক্ষার্থী। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে সংশ্লিষ্টরা দু’এক বিষয়ের বই দিলেও জেলার কোথাও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এখনো কোনো বই দিতে সক্ষম হয়নি। এতে প্রতিবছর বিদ্যালয়গুলোতে যে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে, তা এখন ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, দ্রæত সব শিক্ষার্থীরা হাতে বই পেয়ে যাবে।
এছাড়া বইবিহীন পাঠদান ও তীব্র শীতে স্কুলে যাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা চরম বিরক্ত। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতিও কমে আসছে। এছাড়া বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে বসে থাকতেও তারা নারাজ। অনর্থক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বসে থেকে একদিকে যেমন বিরক্ত হচ্ছে, অপরদিকে প্রচন্ড শীতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রাথমিক অধিদপ্তরের কোন নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষকসহ চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগও এ ব্যাপারে কোন আদেশ দিতে পারছে না।
সরেজমিনে জেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা বইবিহীন ক্লাশ করছে। এতে বিব্রত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতি বছর বছরের শুরুর দিন সবাই একযোগে নতুন বই নিয়ে বাড়ি যেতো। এ বছর বই ছাড়াই ক্লাশ করতে হচ্ছে। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনযোগী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।
অপরদিকে শিক্ষকরা জানান, বই না আসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণি ছাড়া বাকি শ্রেণিগুলোতে দু’এক বিষয়ের বই এসেছে। নির্ধারিত সময়ে বই এসে না পৌঁছলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পাঠ শেষ করা কঠিন হয়ে পরবে বলে শিক্ষকরা জানান।
এদিকে বইবিহীন পাঠদানে আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে আসছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তারা আরো জানান, ক্লাশ সিডিউল বেলা ৪টা পর্যন্ত বহাল থাকায় শিক্ষার্থীরা এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সারা দেশে এখন তীব্র শীত প্রবাহিত হচ্ছে। এই শীতে শিক্ষার্থীদের বইবিহীন সারাদিন পাঠদানের নামে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে রাখায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার অভিভাবকদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এ জেলায় ৮টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৭শ’ ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯শ’ ৮৬ জন। এসব শিক্ষার্থীদের বিপরীতে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৪২টি নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
তবে কি কারণে এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতে বই হাতে আসেনি তা নিশ্চিত করতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তবে অভিযোগ আছে, দেশে কাগজ সঙ্কট আর ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাগজ আমদানী না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রেস মালিকরা বই ছাপাতে ব্যর্থ হয়। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই হাতে বই পায়নি। তবে এই সংকট সহসাই কাটবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা প্রশ্ন রয়েছে।
তবে সর্বমহলের দাবি দ্রæত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি ও পাঠমুখী করতে হবে। গত দুই বছর করোনার প্রভাবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
ঐ সঙ্কট এখনো কাটানো যায়নি। এখন যদি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া না যায় তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
এদিকে গেল বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এক শিফটে পরিচালিত হবে। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সময় কমে আসবে। বছর শুরু হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা এখনো পায়নি বিদ্যালয়গুলো। এতে করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই না আসা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম সীমিত করার তাগিদ দিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, শীতের তীব্রতায় বইবিহীন পাঠদানে শিক্ষার্থীদের শিখন ফলে তেমন কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। একই সাথে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পরছে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আগেই দিনের শ্রেণি কার্যক্রম কমিয়ে আনার দাবি করছেন অভিভাবকরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ইল্শেপাড়কে জানান, জানুয়ারির ১ তারিখে প্রথম শ্রেণির ২টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৩টি ও চতুর্থ শ্রেণির ৪টি বই শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির কোন শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি বলে তারা জানান। কবে নাগাদ বিদ্যালয়গুলো বই পাবে এ বিষয়ে শিক্ষকরা কিছুই জানেন না বলে তারা দাবি করেন।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন ইল্শেপাড়কে জানান, আশা করছি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীরাই তাদের বই পেয়ে যাবে। এছাড়া তিনি আরো জানান, সরকারি সিদ্ধান্তেই বিদ্যালয় ক্লাশ সিডিউল নির্ধারিত। তাই শীতের প্রকোপ কিংবা নতুন বই পাওয়া না পাওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কোন সময় পরিবর্তন করতে পারে না। যা সরকারি সিদ্ধান্ত বলে তিনি দাবি করেন।
১৫ জানুয়ারি, ২০২৩।