স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট শিশু জন্ম দিতে হবে
………সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল
এস এম সোহেল
‘যত্নে রাখি শিশু ও মা, গড়ি আগামীর সম্ভাবনা’ এ স্লোগানে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুর আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের জায়গা। এ শহরে আমার জীবনের ১৬টি বছর কাটিয়েছি। আমরা শিশুদের জন্য এবং উন্নয়নে কাজ করছি। মা এবং শিশুদের কল্যাণে আমাদের অনেকগুলো কর্মসূচী রয়েছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবে সপ্তাহে দুইদিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে যৌতুক, সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা হয়। প্রত্যেক ইউনিয়নে কিশোর-কিশোরী ক্লাব করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের বিষয়ে প্রচারণা করতে হবে। শিশুদের চিন্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। শিশুদের ব্রেন যাতে ঠিকমতো কাজ করে বিকশিত হতে হতে পারে সেজন্য অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মাকে ভালো পুষ্টির সহায়তায় এ ক্যাম্পেইন। বৈশি^ক মন্দার মধ্যে দিয়ে বিশ্ব এখন যাচ্ছে। তারপরও এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য দিয়ে তার মেধাকে বিকশিত করেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এতোদিন ধরে শুনেছি ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এসে আমাদের দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষে কাজ শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ হতে হলে স্মার্ট শিশু জন্ম দিতে হবে। শিশুরা যদি মননে-মেধায় স্মার্ট না হয়, তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটা আমাদের সবার অবস্থান থেকে সকলে খোঁজখবর রাখতে হবে। আজ স্বাধীনতার ৫১ বছরের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়া যাচ্ছে।
তিনি আরো বলের, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরেকটি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। শিশু মৃত্যুর হার ১৮ ভাগ। আমরা শিশুদের সাঁতার শেখানোর কর্মসূচী রয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার ইনভেস্টমেন্ট করছে। মেধা ও স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ শিশু জন্মাবে। এলাকাভিত্তিক কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে। নারী আত্মকর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অনেক আগ থেকে সবদিকে চাঁদপুর একটি সমৃদ্ধ জেলা।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মনোয়ারা ইশরাত ও পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।
কর্মশালার শুরুতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিষয়বস্তু তুলে ধরেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক রুবিনা গনি।
চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালনক নাছিমা আক্তারের পরিচালনায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মো. ইলিয়াছ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাসুদা নূর খান, রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর আয়শা রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কিশোর-কিশোরী ক্লাবের উপ-সচিব ও ডিপিডি (আইজিএ প্রকল্প) মো. কেরামত আলী, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সালেহা বিনতে সিরাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. কাউছার আহমেদ, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হাসান, মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, এএইচএম আহসান উল্যাহ, দৈনিক ইল্শেপাড়ের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান মাহবুবুর রহমান সুমন, আশিকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী, শাহমাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী, বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল্যাহ পাটওয়ারী, মৈশাদী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম পাটওয়ারীসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, কর্মশালার প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিলো- মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি (Mother and Child Benefit Programme) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত সরকারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। কর্মসূচিটি গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং শহর এলাকার কম আয়ের কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচির একটি সমন্বিত ও উন্নত সংস্করণ।
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে (এনএসএসএস) নির্দেশিত জীবনচক্র ভিত্তিক কাঠামোর (Life Cycle Framework) আওতায় মাতৃগর্ভ অর্থাৎ ০ থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির চাহিদা, মনো-সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে এই কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।
কর্মসূচির সার্বিক উদ্দেশ্য- গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন যত্ন থেকে শুরু করে শিশুর জন্মের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ১০০০ দিনসহ ৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ।
কর্মসূচির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য-
* গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নির্দেশকের (খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য, পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ ইত্যাদি) উন্নয়ন।
* বয়সের তুলনায় কম উচ্চতার শিশু বা খর্বকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাস।
* উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশু বা কৃশকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাস।
* শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা।
কর্মসূচির সুবিধাদি- দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী গর্ভবতী মা শুধুমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় (সর্বোচ্চ দু’জন) সন্তানের জন্য এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৩৬ মাস ৮০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। প্রতিমাসে ভাতা প্রদানের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি, যত্ন এবং শিশুর পুষ্টি, মনো-সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বিষয়ে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
ভাতাভোগী বাছাই ও ভাতা প্রেরণ প্রক্রিয়া- কর্মসূচির আওতায় ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে ভাতাভোগীর আবেদন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ভাতা পাওয়ার উপযোগী দরিদ্র, হত দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের পরিবারের গর্ভবতী মা প্রয়োজনীয় তথ্যসহ (জাতীয় পরিচয়পত্র, গর্ভধারণ সেবা কার্ড, নিজস্ব একাউন্ট তথ্য) প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং নির্দিষ্ট গার্মেন্টস কারখানা থেকে অনলাইনে অথবা তথ্য সেবা সহকারীদের মাধ্যমে বাড়িতে বসে আবেদন করতে পারেন।
আবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে যাচাই-বাছাই, সুপারিশ এবং চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে থাকে। প্রক্রিয়াটি অনলাইনে একটি Management Information System (MIS) এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে যার ফলে ভাতাভোগী সরাসরি জিটুপি প্রক্রিয়ায় মোবাইল একাউন্ট বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে তার ভাতার অর্থ উত্তোলন করতে পারেন।
প্রত্যাশিত ফলাফল- কর্মসূচিটি স্বল্পমেয়াদে বিদ্যমান অপুষ্টি বিশেষতঃ কম ওজনের শিশু, খর্বকায় এবং কৃশকায় শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে এবং দীর্ঘমেয়াদে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে অবদান রাখবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচিটির মধ্য দিয়ে
রূপকল্প ২০৪১ এ বর্ণিত একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রতিযোগী সক্ষম ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে সরকারকে সহায়তা করবে।
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২।