ইলশেপাড় রিপোর্ট
দীর্ঘ ১৬ বছর পর চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আলোচিত ইউনিট হচ্ছে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগ কমিটি। এই ইউনিট কমিটি হতেই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব তৈরি হয় বলে দলটির নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন। দলের ক্রান্তিকালীন সময়ে এই ইউনিট কমিটিই দলের কান্ডারীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় সবসময়ই। এজন্য জেলার অভ্যন্তরে সবসময় আলোচনা ও সমালোচনায় থাকতে দেখা যায় চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে।
এদিকে আজকের সম্ভাব্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক ডজনের বেশি নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দৌড়-ঝাঁপ করলেও আলোচনা এখন এক অনুপ্রবেশকারী নেতাকে নিয়েই। এই নেতা একসময় বঙ্গবন্ধুর খুনির সংগঠন ফ্রিডম পার্টির আলোচিত নেতা ছিলেন। এমনকি দলের অভ্যন্তরেই অভিযোগ আছে- চাঁদপুর পুরানবাজারে বঙ্গবন্ধুর এক কুলখানি অনুষ্ঠানে কাঙালি ভোজের মাংসের ডেগ লাথি দিয়ে ফেল দেয় এই বিতর্কিত, সমালোচিত ও অনুপ্রবেশকারী নেতা। এ বিষয়টি চাঁদপুর শহরের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই জানলেও রহস্যজনক কারণে কেউই তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আর ঐ বিতর্কিত নেতাও সুযোগ বুঝে ক্ষমতাসীনদের বগল ধরে হাটতে দেখা যায়। ফলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা আর তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহসও পান না।
মাঠ পর্যায়ের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন, দলের এক শ্রেণির সুবিধাভোগী নেতাদের সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে এই বিতর্কিত নেতা চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে স্থান করে নেয়। দলে স্থান পাওয়ার পর এই নেতার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলকে ব্যবহার করে ঠিকাদারী আর কারসাজীর মাধ্যমে গেছেন ধনকুবের। এখন সে দলের অভ্যন্তরে বিরোধ সৃষ্টি করে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যের খোঁজ জানতে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) আলাপকালে জানা গেছে, বিতর্কিত এই নেতা ইতোমধ্যে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ভোটার প্রায় সাড়ে তিনশ’ কাউন্সিলরকে মুজিব কোর্টসহ পাজামা-পাঞ্জাবি ও নগদ অর্থ পৌঁছে দিয়েছেন। যার কারণে প্রত্যেক কাউন্সিলর এখন এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। তবে কেউ কেউ বলছেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপহার হিসেবে সবসময় অনেক পদ-প্রত্যাশীরা কিছু না কিছু দিয়ে থাকেন।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, যারা সম্মেলনে প্রার্থী হতে আগ্রহী তাদের আবেদন ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত ঐ নেতার আবেদন দলীয় ফোরামে সর্বসম্মতভাবে বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রে তার আবেদন প্রেরণ করা হয়নি। যার কারণে অনুপ্রবেশকারী ঐ নেতা এখন কেন্দ্রিয় পর্যায়ে দৌঁড়-ঝাঁপ শুরু করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঐ বিতর্কিত নেতার ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব পুরো চাঁদপুর শহর। এ নিয়ে কেবল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়েই সমালোচিত হচ্ছে না, সাধারণ সমর্থকরাও এ নিয়ে বিব্রতবোধ করছে। তারা বলছে, এই নেতা যদি দলে স্থান পায় ভবিষ্যতে সাংগঠনিক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য এখনই এ নেতার বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ নেতাসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যেরও সতর্ক হওয়া দরকার। এর ব্যত্যয় ঘটলে জনমনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল আওয়ামী লীগ বিতর্কের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তৃণমূল সমর্থকরা।
এদিকে আজকের সম্মেলনেই এই বিতর্কিত নেতার সদস্যপদসহ স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জোরালোভাবে উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, যে বা যারাই এই ফ্রিডম পার্টির নেতাকে দলে অবস্থানের সুযোগ করে দিবেন তারা আগামি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বেকায়দায় পড়তে পারেন। সামান্য উপঢৌকন বা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে বিতর্কের মুখে ফেলতে চান তারা চিহ্নিত হয়ে পরবেন শীঘ্রই। এজন্য নেতা-কর্মীরা বলছেন সময় থাকতেই সাধু সাবধান!
অপরদিকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আরো দাবি করছেন, যেসব কেন্দ্রিয় নেতা আজ কাউন্সিল-সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন তাদের নজরে এই বিতর্কিত নেতার কর্মকান্ড প্রকাশ করে দলকে নিরাপদ করাই এখন সবার নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি বিতর্ক এড়াতে কেন্দ্রিয় নেতাদের মাধ্যমেই পৌর কমিটি ঘোষণা করা হলে এই অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতা কোনঠাসা হয়ে পড়বেন বলে কর্মী-সমর্থকরা আশাবাদী।
০৫ ডিসেম্বর, ২০২২।