চাঁদপুর মডেল থানার হেলাল ও শহীদ উল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সদর মডেল থানার এএসআই হেলাল ও শহীদ উল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রিপনকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক দেখানোর পর ৩৪ ধারায় আদালতে সোপর্দের ঘটনার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় দুই এএসআই এর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াছির আরাফাতকে দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
জানা গেছে, চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের এএসআই হেলাল ও শহীদ উল্লাহ গত ৬ নভেম্বর (সোমবার) রাতে আদালত পাড়ায় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে স্থানীয় রোকেয়া বেগমের বাসা থেকে ভাড়াটিয়া জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন (২৫০৩) এর সাবেক সভাপতি রিপন বেপারী ও ২ তরুণীকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে।
এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ঐ পুলিশের দু’কর্মকতার সাথে তাৎক্ষণিক মোটা অংকের লেনদেনের বিনিময়ে ঘটনাস্থলে ঐ দু’নারীকে রেখে শুধুমাত্র রিপন বেপারীকে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পত্রিকায় পুলিশের বক্তব্য ও মাদকসহ আটক রিপনের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদ প্রকাশের পর থানা সূত্রে জানা যায়, মাদকসহ আটক রিপনকে ৩৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এরপরই মোটা অংকের টাকা নিয়ে রিপনকে ৩৪ ধারায় আদালতে পাঠানোর ঘটনার নানা গুঞ্জন শুনা যায়। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। একের পর এক অভিযোগ ওঠে এই দুই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর এলাকায় যত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের প্রায় সবার সাথেই তাদের সখ্যতা রয়েছে। থানার মধ্যে এমনকি তাদের কক্ষে মাদক ব্যবসায়ী যাতায়াত এবং গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় মেতে উঠে। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে ভদ্র পরিবারের এবং অর্থশালী বা সাবলম্বী পরিবারের সদস্য যারা মাদক সেবন করে না তাদের টার্গেট করে মাদক দিয়ে ঘটনাস্থলে ধরে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে ঘটনাস্থলে ছেড়ে দিয়ে আসে। এভাবেই এ দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা গত কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২/৩ মাসে চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা সম্মানিত পরিবারের ও অর্থশালী পরিবারের সদস্য বয়সে যুবক এমন কয়েক জনকে ১ বোতল, ২ বোতল ফেন্সিডিল, কাউকে ৫ পিস, কাউকে ১০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে লক্ষ-লক্ষ টাকা আদায় করে। তম্মধ্যে শহরের বিপণীবাগ বাজারের এক ব্যবসায়ীর ছেলে, একজন যুবনেতাকে আটক করে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা আদায়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের টার্গেটকৃত আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশ সময়ে থানার ভিতরে প্রবেশ না করিয়ে তাদের নির্ধারিত স্থানে রেখে দাবিকৃত টাকা আদায় করে। পাশাপাশি কাউকে কাউকে থানায় আনলেও লকআপে না রেখে থানার ভিতরে থাকা তাদের রুমে আটকে রেখে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এ দু’কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানায় যোগদানের পর পরই অঢেল অর্থের মালিক হয়ে যান। কেউ কেউ চাঁদপুরে টাকা কামাই করে মাইক্রো কার বা হাইস গাড়ি নতুন মডেলের গাড়ি ক্রয় করে চাঁদপুরে গাড়ির ব্যবসা করছেন।
সরকারের নিয়মের বেশি সময় চাঁদপুর থাকায় অবৈধ পন্থায় টাকা রোজগার করতে বেগ পোহাতে হয় না। এমনকি এরাই আবার জোর গলায় বলে বেড়ান যেমন ইনকাম করি, তেমনি ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতন স্যারদের ম্যানেজ করেই ইনকাম করছি।
একটি সূত্রে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা এই দু’কর্মকর্তার দাপটের কারণে অনেকে অসহায় ও আবার অনেকে বিব্রত। এদের কর্মকাÐ নিয়ে থানায় স্বয়ং পুলিশ বিভাগের মধ্যেই রয়েছে নানা ধরনের মুখরোচক গল্প।
এই দু’এএসআই বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ শহর জুড়ে আলোচনায় রয়েছে, বিভিন্ন মানুষের সাথে লাখ-লাখ টাকার চুক্তি অনুযায়ী মানুষকে মাদক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আটক করা। তাদের কথা অনুযায়ী কোনো মাদক ব্যবসায়ী না চললে অভিযানের নামে হয়রানি এবং অতিরিক্ত মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া।
মাদক অভিযান চালিয়ে বড় ধরনের মাদকের চালান উদ্ধার করে, সেই উদ্ধারকৃত মাদক থেকে নিজেরাই বেশি মাদক রেখে গোপনে সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা।
এমন একটি ঘটনা অর্থাৎ শহরের কুখ্যাত এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে ফেনসিডিল বিক্রি করার বিষয় আলোচনা চ‚ড়ান্ত করে। কিন্তু ঐ মাদক ব্যবসায়ী তার ঘনিষ্ঠ আরেক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করলে, তাৎক্ষণিক ঐ মাদক ব্যবসায়ী এদের দু’জনের কাছে ভালো সাজতে গিয়ে ঘটনা বলে দেয়। এ ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক এরা গভীর রাতে মাদকের অভিযানের নামে অভিযান চালিয়ে ঐ মাদক ব্যবসায়ীকে অর্ধশত বোতল ফেনসিডিল দিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঐ সময় এ ঘটনাটি পুলিশ সদস্যদের মাঝে জানাজানিও হয়।
এদিকে ইয়াবাসহ আটক হাইমচর উপজেলা গন্ডামারা গ্রামের শহীদুল্লাহ বেপারীর ছেলে রিপন বেপারী নিজেই বলেছেন, আমি পুলিশ পরিবারের সদস্য। তারপরও এরা আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছে। সে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে যে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে, সে ইয়াবাগুলো আমার নয়।
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়ের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মাদকসহ কোনো ব্যক্তি আটক হলে অবশ্যই তাকে মাদক মামলায় আদালতে সোপর্দ করতে হবে। ৩৪ ধারায় আদালতে সোপর্দের প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি ভালো করে জেনে জানাবো।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আটক রিপনের ভাইয়ের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার ভাইকে মাদকসহ আটক করা হয়নি। তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। আবার পত্রিকায় দেখলাম মাদকসহ আটকের ছবি। পুরো বিষয়টা তদন্তের জন্য আমি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইয়াছির আরাফাতকে নির্দেশ দিয়েছি।

১০ নভেম্বর, ২০২৩।