স্টাফ রিপোর্টার
ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নামে-বেনামে বিভিন্ন ফি আদায়ের যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঐ এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিম্নআয়ের। করোনা মহামারিতেও ঐ বিদ্যালয়ে এসএসসির ফরমফিলাপ এবং নামে-বেনামে বিভিন্ন ফি আদায় করা হচ্ছে।
একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জের সাহেবগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী জেএসসির রেজিস্ট্রেশন ফির টাকা এবং অ্যাসাইনমেন্টের খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, জেএসসিতে ২শ’ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি হলেও আমাদের কাছ থেকে তিন মাসের ৬শ’ টাকা বেতনসহ নেয়া হচ্ছে ১৫শ’ টাকা করে। দু’জন এসএসসি পরীক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ফরমফিলাপে ১৯শ’ টাকা নেওয়ার কথা এবং ২০২১ সালের বেতন মওকুফ করার কথা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকারও বেশি নেয়া হচ্ছে।
এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, এই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা নিম্নআয়ের মানুষ। কেউ দিনমজুরি করেন, আবার কেউ কেউ রিকশা ও ভ্যান চালায়। তাদের পক্ষে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া করোনাকালীন সময় তাদের আয়ও কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, স্যারদের সঙ্গে কথা বলতে এখানে এসেছি। আমি রিকশা চালাই। বর্তমানে করোনা, তাই মানুষ চলাফেরা কম করে। এখন যা রোজগার করি তাতে আমার সংসার চলে না। আমার মেয়েকে এত টাকা দিয়ে পড়াতে পারবো না।
এ ব্যাপারে সাহেবগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। রাকিব নামে এক শিক্ষক বলেন, কিসের সাংবাদিক আপনারা? আপনাদের কে দায়িত্ব দিয়েছে, আমাদের স্কুলের ব্যাপারে নাক গলানোর? আপনারা কেন আমাদের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মোবাইলে ধারণ করেছেন? এরপর তারা মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় সাংবাদিকদের সাথে ধস্তাধস্তিও করেন।
এ বিষয়ে ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকউল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ব্যাপারে আমি জানি না। আমি প্রধান শিক্ষককে ডেকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহ আলী রেজা আশরাফী বলেন, ফরম ফিলাপের আগেই আমি স্কুলগুলোতে চিঠি দিয়েছি, অতিরিক্ত অর্থ না নেওয়ার জন্য। ২০২১ সালের কোন বেতন, সেশন চার্জ বাবদ কোন অর্থ নেওয়া যাবে না। কোন পরীক্ষার্থী যদি ২০২০ সালের এক বছরের পুরো বেতন বকেয়া থাকে তবুও ঐ স্কুলে ১২ মাসের বেতন ১২শ’ কিংবা ১৮শ’ এবং ফরম ফিলাপের টাকাসহ ৩৮শ’ কিংবা অতিরিক্ত ১০০ টাকাসহ ৪ হাজার টাকার বেশি কোনভাবেই নেয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও তারা নির্দেশনা মানছেন না। আমি ফরিদগঞ্জে এসে অস্বস্তিতে পড়ে গেছি। আমার কাছে এরকম অভিযোগ আরো এসেছে। করোনাকালীন সঙ্কটে শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার গিয়াসউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, মাউশি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে আমরা নির্দেশনা পেয়েছি কোনভাবেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। এবং এই নির্দেশনা আমরা স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের সাথে মিটিং করেও আমরা একাধিকবার তাদের জানিয়েছি করোনাকালীন সঙ্কটে কোনভাবেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। কিন্তু তারপরও শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করা যায় না। এটা খুব দুঃখজনক। আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে বলা হয়েছিল কোন অভিভাবক যদি অসমর্থ হন তবে তার টিউশন ফিও আদায় করা যাবে না, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের তো প্রশ্নই আসে না। পুরো দেশ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। এসময় আমাদের মানবিক হতে হবে। কিন্তু তারপরও যদি নির্দেশনা না মানে তবে আপনারা বোর্ডের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।
১১ এপ্রিল, ২০২১।