বেলচোঁ বাজারে ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ


হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন বেলচোঁ বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে গত সোমবার বিকালে উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের কাছে এ অভিযোগের মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করেন।
তারা জানান, সম্প্রতি জুয়া খেলার অভিযোগে বেলচোঁ বাজারের ব্যবসায়ী ও বড়কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক মিয়াজী, ব্যবসায়ী ও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান তফাদার, ব্যবসায়ী ও ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু কালাম, ব্যবসায়ী ও সদস্য মোশারফ হোসেন এবং ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের সমর্থক সেলিম মোল্লা, শাহআলম এবং বেলচোঁ বাজারস্থ একটি মার্কেটের পাহারাদার রুস্তম আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রকৃতপক্ষে তারা জুয়াড়ী নয়। বেলচোঁ বাজার সাধারণত সকাল, বিকাল এবং ভোর বেলায় মাছের আড়ৎ জমে থাকে। অন্য সময়ে ব্যবসায়ীদের অবসর সময় থাকতে হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা লুডু খেলার মাধ্যমে অবসর সময় পার করে থাকেন। অথচ স্থানীয় প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল উল্লেখিতদের ধরিয়ে দেয়। তারা আরো বলেন, ওই স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যতম হলেন আহসান হাবিব। সেসহ তারা এভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ নিরীহ লোকজনদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। তাই তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন তারা।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জুয়াসহ সব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এজন্য আমরা তৃণমূলের কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আওয়ামী লীগ সরকারের যে কোন উদ্যোগ ও দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যাদের জুয়া খেলা থেকে পুলিশ আটক করেছে তারা যদি প্রকৃত জুয়াড়ী হয়ে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক। অথবা কোন স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক। আটকরা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক বলে তিনি জানান।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশ্বাদ পাটওয়ারী বলেন, এরা বেলচোঁ বাজারের ব্যবসায়ী, জুয়াড়ী নয়। তাই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণের আবেদন জানান তিনি।
জিল্লুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আটকদের মধ্যে ৬ জন ব্যবসায়ী এবং একজন মার্কেটের (রহমান ম্যানশন) পাহারাদার। তারা অবসর সময়ে লুডু খেলে। তারা জুয়াড়ী নয়। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত টাকাও জুয়ার নয়। তিনি বলেন, যেহেতু এরা ব্যবসায়ী, তাদের কাছে টাকা থাকতেই পারে। তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের আবেদন জানান।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী সফিউল্যাহ্ পাটওয়ারী, ইলিয়াছ তফাদার, ইউনিয়ন আনসার-ভিডিপির দলপতি কামাল পাশাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী দুলাল মিয়াজী, আলফু সর্দার, খোরশেদ আলম মল্লিক, মজিবুর রহমান, ডাক্তার শাহাজাহান, হাছান খাঁ, আব্দুর রব মেম্বারসহ বেলচোঁ বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে আহসান হাবিব বলেন, আমি ব্যবসায়ীক ও পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাছাড়া যেদিন এবং যে সময় তাদের আটক করা হয়েছে ওই সময়ে আমি বাজারে ছিলাম না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন জানান, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ জুয়া খেলা অবস্থায় ৭ জনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, তথ্য যাচাই-বাচাই পূর্বক এবং তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়ে থাকে, অথবা কোন ধরনের অভিযোগ থাকলে, তারা থানায় আসুক। আমাদের তথ্য দিক, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেলচোঁ বাজারের একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ ১৬ হাজার টাকাসহ উল্লেখিতদের হাতে-নাতে আটক করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুুুুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন।

০২ অক্টোবর, ২০১৯।