ভাঙন আতঙ্কে চরলক্ষীপুরের বাসিন্দারা

মাহফুজ মল্লিক
মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ভাঙন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ চরলক্ষীপুর গ্রামের ৩ হাজার সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে ধনাগোদা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতঘর, ফসলি জমি ও পারিবারিক কবরস্থান। হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের একমাত্র স্কুল চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই গ্রামে একটিমাত্র মাদ্রাসা ও মাজার রয়েছে, যেটি প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।
সরেজমিনে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত ধীরে-ধীরে ধনাগোদা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চরলক্ষীপুরের কয়েকশ’ একর ফসলি জমি। নদীবেষ্টিত চরলক্ষীপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই নদী ভাঙনের কারণে এখানকার কৃষকরা প্রায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি- যত দ্রুত সম্ভব কোনরকমভাবে হলেও গ্রামবাসীকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম প্রধান, কামরুজ্জামান রিপন, আলাউদ্দিন প্রধান ও মামুন প্রধান জানান, দীর্ঘদিন যাবত আমরা ধনাগোদা নদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছি। গত ৩ মাস যাবত ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। আমাদের অনেক ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বসতভিটা নিয়ে আমরা আতংকে দিনযাপন করছি।
জমি-জমাতে ফসলাদি করে আমাদের দিন চলে। সেই ফসলী জমিটুকুও নদীতে বিলীন হয়ে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাদের বসতভিটেটুকু রক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে মাথা গোজার মত একটু জায়গা থাকে।
এখানকার মানুষের শহরে বা অন্য কোথাও গিয়ে জমি কিনে বসতি করার সামর্থ্য অনেকেরই নেই।
স্থানীয় মুরুব্বী আলহাজ কাজি নাসির উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ ইলিয়াস প্রধান ও আলহাজ আব্দুল কাদির প্রধান বলেন, চরলক্ষ্মীপুর গ্রামটি একেবারে নদীবেষ্টিত। এই গ্রামের চতুর্দিকেই নদী। এখানে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে একটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার ও ঈদগা রয়েছে। নদী ভাঙনের যে তীব্রতা দেখা দিয়েছে তাতে গ্রামের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মাদ্রাসা ও ঈদগাহের একেবারে পাশেই নদী চলে এসেছে। যেকোনো সময় গ্রামের ঈদগাহ ময়দানটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই ভাঙন প্রতিরোধে আমরা উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট অফিসে কতবার আবেদন করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি।
সুলতানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রধান প্রধান বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আমাদের এমপি ছিলেন। ওনাকে একাধিকবার বলার পরও উনি শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে গ্রামটি প্রায় বিলীন হয়ে যাবে।
চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এএইচএম জামাল সাকিব বলেন, পুরো গ্রামবাসীর জন্য এই একটি মাত্র স্কুল রয়েছে এখানে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় স্কুলের কাছে চলে এসেছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে স্কুল ও গ্রামবাসীকে রক্ষা করা যাবে না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব এই গ্রামটিকে রক্ষা করতে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থাগ্রহণ করুন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা-ধনাগোদার নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমি নিজে সেখানে যাব। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

০৫ মে, ২০২৫।