মতলবে আর্সেনিক ঝুঁকিতে সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

মতলব দক্ষিণ ব্যুরো
মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে ১৮ হাজার ৯শ’ ৪০টি নলকূপে। আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ শতাধিক মানুষ। চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না তাদের অর্ধেকেরও বেশি।
আর্সেনিক মিটিগেশন জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মতলবের দু’টি উপজেলার নলকূপগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। এসব নলকূপে ৯৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
মতলব জনস্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মতলব দক্ষিণ উপজেলার যেসব নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে, এর মধ্যে দক্ষিণ নায়েরগাঁও ইউনিয়নে ১ হাজার ১শ’ ৪৫টি, আক্রান্ত ৩০ জন। উত্তর নায়েরগাঁও ইউনিয়নে ১ হাজার ৩টি, আক্রান্ত ৫ জন। উপাদি দক্ষিণ ইউনিয়নে ৮শ’ ৯৭টি, আক্রান্ত ৮৩ জন। খাঁদেরগাঁও ইউনিয়নে ৮শ’ ৫৬ টি, আক্রান্ত ১৩ জন। নারায়নপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৬শ’ ৯৪টি, আক্রান্ত ৬৭ জন। উপাদি উত্তর ইউনিয়নে ৯শ’ ২৫টি, আক্রান্ত ২৯ জন। মতলব পৌরসভাসহ এসব এলাকায় মোট ৪শ’ ৫০ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১২ হাজার ১শ’ ৪১টি নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে বাগানবাড়ি ইউনিয়নে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ ১ হাজার ২৫টি, আক্রান্ত ২৩ জন। দুর্গাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৪শ’ ৩৮টি, আক্রান্ত ১৬ জন। এখলাছপুর ইউনিয়নে ৪শ’ ২৫টি, আক্রান্ত ১ জন। ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে ১ হাজার ৭শ’ ৮৭টি, আক্রান্ত ২৮ জন। ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৬শ’ ৭২টি, আক্রান্ত ২২ জন। জহিরাবাদ ইউনিয়নে ৪শ’ ৯৫টি, আক্রান্ত ১২ জন। কলাকান্দা ইউনিয়নে ৭শ’ ২১টি, আক্রান্ত ১৫ জন। মোহনপুর ইউনিয়নে ৭শ’ ৩২টি, আক্রান্ত ৮ জন। পশ্চিম ফতেপুর ইউনিয়নে ৫শ’ ৮৭টি, আক্রান্ত ২১ জন। সাদুল্যাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৮টি, আক্রান্ত ৩০ জন। ষাটনল ইউনিয়নে ১ হাজার ১শ’ ৯টি, আক্রান্ত ১৫ জন। সুলতানাবাদ ইউনিয়নে ৫শ’ ৩৩টি, আক্রান্ত ১৭ জন। ছেংগারচর পৌরসভাসহ মোট আক্রান্ত ৩শ’ ৭০ জন।
এ দু’টি উপজেলার ২২ হাজার ১শ’ ৫১টি নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ১৮ হাজার ৯শ’ ৪০টি নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এ হিসেবে দু’টি উপজেলার ৮৬ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দু’টি উপজেলায় ৮শ’ ২০ জন আর্সেনিক রোগীর মধ্যে চিকিৎসা পাচ্ছে মাত্র ৩শ’ ৩৭ জন। এর মধ্যে মতলব দক্ষিণে ১শ’ ৫৫ জন এবং মতলব উত্তর উপজেলায় ১শ’ ৮২ জন। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তারা চিকিৎসা পেয়েছিলেন। এরপর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আর কোন তথ্য নেই।
এসব এলাকায় স্থানীয় আইসিডিডিআরবি ও ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আর্সেনিক যুক্ত নলকূপে লাল রঙ দিয়ে সীল করে দেওয়ার পরও অসচেতনা ও নিরাপদ নলকূপের অভাবে মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। আর্সেনিকের পানি পান করে গত পাঁচ বছরে কমপক্ষে সহস্রাধিক লোক আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে দু’উপজেলার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৩৫টি ছোট বড় হাট বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁয় জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি আর্সেনিকযুক্ত পানি খাওয়ানো হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. মহিবুল্লাহ সৌরভ বলেন, এ ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা। হাসপাতালে যারা আসছে তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

০৪ মার্চ, ২০২৪।