রাস্তার কাজ না করে প্রকল্পের টাকা গেল চেয়ারম্যানের পকেটে

এস এম সোহেল
চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী গ্রামীণ অবকাঠামো (কাবিটা) প্রকল্পের আওতাধীন একটি সড়কের কাজ না করে পুরো টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন। প্রকল্পটি হলো ‘আশিকাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে পাকা রাস্তা হতে মরহুম মান্নান খানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন’। ২০২১-২২ অর্থবছরে সড়কটি ইটের সলিং করতে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৬শ’ ৪৬ টাকা। এ বরাদ্দের টাকা তিন কিস্তিতে তুলে নিয়েছেন আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী। চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মরহুম মান্নান খানের বাড়ি যেতে একটি কাঁচা সড়ক রয়েছে। ওই সড়কটি একটি ইটের সলিং করা রাস্তার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। অথচ প্রকল্পের যে পাকা সড়কের কথা বলা হয়েছে ওই বাড়ির সাথে পাকা সড়কের কোনো সংযোগ নেই। অর্থাৎ প্রকল্পের সড়কটি নামমাত্র সড়ক বলাই যায়। তবে প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী প্রকল্পের শুরুতে প্রথম কিস্তির টাকা তোলার সময় অপর একটি সড়কের ছবি সংযুক্ত করেছেন। যে ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে এটি অপর একটি সড়ক। ওই সড়কটি আগেই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ইটের সলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মরহুম মান্নান খানের বাড়ি যেতে পাকা সড়কের কোনো অস্তিত্বই নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শুনেছি পাকা রাস্তার সাথে সংযোগ করে একটি রাস্তা হবে। জায়গা জটিলতার কারণে সড়কটিই হয়নি। পাকা বা ইটের সলিং করবে কিভাবে?
এ বিষয়ে আশিকাটি ইউনিয়নের সচিব বলেন, আমি এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানি না।
প্রকল্পের সভাপতি চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, প্রকল্পের টাকা আমার কাছে আছে। রাস্তার কাজ করা সম্ভব হয়নি, স্থানীয়ভাবে সমস্যা রয়েছে। তবে কি সমস্যা রয়েছে, তা তিনি জানাননি। তার কথার আলোকে বুঝা যায়- এ প্রকল্পের টাকা তিনি একাই আত্মসাৎ করেছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে সরেজমিন পরিদর্শন করে অর্থ ছাড়ের জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছি। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখানে অনিয়ম হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অথচ ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি রাস্তার কাজটি করেননি।
এছাড়া এ প্রকল্পের সেক্রেটারী দুলাল মাল বলেন, আমি এ প্রকল্পের সম্পর্কে কিছুই জানি না। অথচ এ দুলাল মালের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, প্রকল্পের কাজ না করে বিল উত্তোলনের সুযোগ নেই। যদি কেউ টাকা তুলে থাকেন তবে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়, যদি হয় অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

১৭ এপ্রিল, ২০২২।