ভোগান্তিতে পানিবন্দী এলাকার লোকজনসহ শ্রমজীবী মানুষ
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করায় সাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। লঘুচাপটির প্রভাবে গত ২ দিন ধরে উপকূলীয় এলাকাসহ চাঁদপুরে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বইছে ঝড়ো হাওয়া। এতে জনজীবনে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দী এলাকার লোকজনসহ শ্রমজীবী মানুষ।
এর আগে গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লঘুচাপের তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হতে পারে। এ অবস্থায় বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এদিন (শুক্রবার) বিকাল থেকে চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং এই বৃষ্টিপাত চলে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত।
সরেজমিন পরিদর্শন ও আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, লঘুচাপের প্রভাবে চাঁদপুরের সব উপজেলায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা শনিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। টানা বৃষ্টিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কাজের সুযোগ না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন দিনমজুরেরা। বাড়তি উপার্জনের আশায় গায়ে পলিথিন জড়িয়ে বৃষ্টির মধ্যেই রিকশা ও অটোচালকেরা রাস্তায় নেমেছেন।
বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে যানবাহন সংকট এবং তার সাথে টানা বৃষ্টির কারণে শনিবার সকাল থেকেই ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বৃষ্টির প্রভাব ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে লোকজন না আসায় দিনভর বেকার সময় কাটিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যার পরেই অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে চলে গেছেন। ফলে চাঁদপুরসহ উপজেলা সদরের হাট-বাজারের ব্যস্ত সড়ক ছিল একেবারেই ফাঁকা।
এর মধ্যে আগস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে দেশের কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বন্যার প্রভাবে চাঁদপুরের যেসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত ছিল। তা গত কয়েকদিনের খরায় পানি কমে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু লঘুচাপের প্রভাবে গত দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে আবারাও সেসব এলাকায় পানিবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে ডুবে গেছে বাড়ির পথঘাটসহ গ্রামীণ সড়ক। এতে আবারও ভোগান্তিতে পড়েন ওইসব এলাকার লোকজন।
এদিকে, উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মাছধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মেনে চাঁদপুরেও ছোট ছোট নৌযানগুলো সাবধানে চলাচল করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছোট নৌযানগুলো চলাচল করলেও এদিন রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ছোট নৌযানের চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। তবে বড় নৌযানগুলোর চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি দুর্বল হয়ে যাবে। তবে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে আকাশে মেঘ রয়েছে। সমুদ্র এলাকায়ও মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে। আর সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবেই সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। রোববারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও মাঝারি বৃষ্টিও হতে পারে। রোববারের পর থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসতে পারে।
চাঁদপুরে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
চাঁদপুরে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এখন শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। একই সঙ্গে বাতাসের তীব্রতাও বেড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। চাঁদপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে সড়কে মানুষের চলাচল কমে গেছে। তবে কিছু কিছু হকার, রিকশাচালক ও শ্রমিকরা বাসা থেকে বের হয়েছেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সকাল ১০টার পরে খুলেছে।
সদরের অটোরিকশাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, সকালে ভাড়া নিয়ে রামপুর ইউনিয়নের রাড়িচর এসেছি। এখন বৃষ্টির কারণে কোনো দিকে যেতে পারছি না। অনেক অটোরিকশা চালক বৃষ্টির কারণে ঘর থেকেও বের হতে পারছেন না।
সদরের বাগাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকায় এর আগে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কিছুদিন বৃষ্টি কম থাকায় পানি ঘর থেকে নেমে যায়। এখন আবার আগের অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
শহরের পুরাণবাজার বাণিজ্যিক এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল আহসান বলেন, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। দুপুর হলেও অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সড়কও ফাঁকা। রিকশা ও অটোবাইকের সংখ্যা খুবই কম।
একই এলাকার বাসিন্দা শেখ আল মামুন বলেন, টানা বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতায় নদীতে ঢেউ বেড়েছে। পানি বাড়েনি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় জেলেরা নদীতে নামেনি। পুরো নদীই ফাঁকা।
শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকার ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, গত রাত থেকে বৃষ্টি। সকালে দোকান খুলেছি দেরিতে। কারণ ক্রেতা খুবই কম। একান্ত দরকার ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। দুপুর ১২টার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, গত এক সপ্তাহের বেশি চাঁদপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। আরও করুন অবস্থা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে ৭-৮ ঘণ্টা।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ মো. শোয়েব বলেন, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। চাঁদপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।