শীতের মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত

বিপদে খেটে খাওয়া মানুষ, ধানের বীজতলার কিছুটা উপকার

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চাঁদপুরে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি ও কনকনে ঠাণ্ডায় বেড়েছে শীতের প্রভাব। এত জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত চাঁদপুরের সব উপজেলায় গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিলো। এর আগে শুক্রবার গভীর রাত থেকে থেমে থেমে শুরু হয় গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টিপাত।
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট এ নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদিন গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিলো। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সবচেয়ে বিপদে পড়েছিলেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। একদিকে শীত, অন্যদিকে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টিতে তারা কাজেও যেতে পারেনি।
এদিকে শীত ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে হকার, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া যেসব মানুষ কাজে বের হয়েছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। জেলা সদরসহ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। যা ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টিপাতে শিশু-কিশোরদের নিয়েও চরম বিপাকে ছিলেন অভিভাবকরা। শিশুরা ঘর থেকে বের হতে না পারায় দিন কেটেছে বসত-বাড়িতে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন বাবা-মায়েরা। অপরদিকে এ বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও ধানের বীজতলার কিছুটা উপকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
কথা হয়, মানিক নামের একজন অটোচালকের সাথে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা বেশি। তাই রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও ছিলো কম। সকাল থেকে যা ইনকাম করেছি, তা দিয়ে অটো ভাড়ার টাকাও উঠবে না।
ফুটপাতে বসে এমন একজন সবজি (কাঁচামাল) বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভেবেছি দুপুরের পর বৃষ্টি থাকবে না, তাই তরকারি কিনলাম। কিন্তু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেলো, তারপরও বৃষ্টি থামছে না।
হাজীগঞ্জ বাজারস্থ হারুন টাইলস্ এন্ড স্যানেটারির পরিচালক মো. রাসেদ জানান, গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে বাজারে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো মানুষ আসেনি। যার ফলে, সারাদিন দোকানে অলস সময় কাটিয়েছি এবং সন্ধ্যার পরে দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।
দেলোয়ার হোসেন দুলাল নামের একজন কৃষক ও স্কীম ম্যানেজার জানান, আজ (শনিবার) যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে ধানের বীজতলার জন্য কিছুটা উপকার হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত হলে আলু চাষিদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বড় ধরনের ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই। সামনে ইরি-বোরো ধানের মৌসুম। কৃষকরা বীজতলা প্রস্তুত করছেন। বৃষ্টি হলে বোরোর বীজতলা ভালো হবে। আশা করি, শীতকালীন সবজি চাষে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। রোববার পর্যন্ত আবহাওয়ার এ অবস্থা বিরাজমান থাকবে।

২২ ডিসেম্বর, ২০২৪।