হাজীগঞ্জে এক স’মিলে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি

গর্ভবতী ও বয়স্ক রোগীদের নিয়ে স্বজনদের দুর্ভোগ

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও আল-বান্না মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত। সরকারি এই দুইটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং উপজেলার অন্যতম ও ইউনিয়নের একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান পাশাপাশি। আর এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা হলো রামপুর পূর্ব বাজারস্থ মৈশাইদ গ্রামে যাওয়ার সড়কটি।
বিদ্যালয়ের সাড়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মা, বয়স্ক নারী ও শিশুসহ ৬০-৭০ জন রোগী, তাদের স্বজন এবং চিকিৎসক ও কর্মচারী, ভূমি অফিসে আসা ১৫-২০ জন সেবাগ্রহিতা ও দর্শনার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মৈশাইদ গ্রামের একাংশসহ গ্রামীণ এই সড়কটি দিয়েই প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলাচল করে থাকেন।
আর এই চরম ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগের অন্যতম এবং প্রধান কারণ হিসেবে বিসমিল্লাহ স’মিল এন্ড ফার্নিচার হাউজকে দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সড়কটি কাঁচা হওয়াকে দায়ী করেছেন তারা। তাই, সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা জনদুর্ভোগ লাঘবে স’মিল অপসারণ এবং কাঁচা সড়কটি দ্রুত পাকাকরণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চিকিৎসক, রোগী ও তাদের স্বজন এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবাগ্রহিতাসহ স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, কালচোঁ দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ সদর ও কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন থেকে স’মিলে চিরাই করতে আনা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রাস্তার দুই পাশে রেখে জনভোগান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে স’মিলের ব্যবসা পরিচালিত হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে তারা অভিযোগ করে বলেন, স’মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছ এনে রাস্তার দু’পাশে ফেলে জমাট (স্তূপ) করে রাখছে। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যান স’মিলের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থামিয়ে গাছ ওঠা-নামা করায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালে আসা রোগীসহ সাধারণ পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
দেখা গেছে, বছরজুড়ে সড়কের দুই পাশে গাছের স্তূপ থাকা এবং গাড়ি থেকে গাছ লোড ও আনলোড করার কারণে কাঁচা সড়কটির সম্মুখে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়। আর ওই খানা-খন্দে পানি জমে গর্তের সৃষ্টি ও মাটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। এতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও হাসপাতালে আসা রোগীসহ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গর্ভবতী মা ও পা-পিছলে পড়া শিশু শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় আল-বান্না মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতু আক্তার, তাসনিম সুলতানা, সামিয়া সুলতানা ও মুনতাহাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। তারা জানান, বিদ্যালয়ে আসার পথে স’মিলের সামনে সবসময় তাদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া সড়কটি কাঁচা হওয়ায় বর্ষাকালে পা-পিছলে পড়ে প্রায় কোনো না কোনো শিক্ষার্থী আহত হন এবং তাদের পরনের পোশাকসহ বই, খাতা ও ব্যাগ নোংরা হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক মো. শাহাজাহান। তিনি বলেন, সড়কটি দ্রুত পাকাকরণের দরকার। এজন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অফিস সহকারী ফরিদা আক্তার জানান, এখানে প্রতিদিন ৬০/৭০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। এর মধ্যে নিয়মিত চেকআপের জন্য ৪/৫ জন এবং ডেলিভারির জন্য ২/১ জন গর্ভবতী মা আসা-যাওয়া করেন। এতে গর্ভবতী মায়েদের দুর্ঘটনার আশংকা নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় দেখা গেছে, গর্ভবতী মা, শিশুসহ বয়স্ক রোগীদের কোলে তুলে হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, একই স্থানে দুইটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও একটি বিদ্যালয় রয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটি পাকাকরণ হওয়া জরুরি।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সবার যেমন, আমাদেরও তেমন। বিশেষ করে বর্ষাকালে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তাটি পাকা হলে সবার জন্য উপকার হবে।
এ বিষয়ে বিসমিল্লাহ স’মিল এন্ড ফার্নিচার হাউজের প্রোপাইটর মো. আমির হোসেন বলেন, স’মিলের সামনে পানি জমে থাকলে সবসময় আমি ড্রেন করে পানি অপসারণ করে দেই। এছাড়া ২/৩ বছর আগে আমি চার ট্রাক ইট-বালি ফেলে রাস্তাটি চলাচলের উপযুক্ত করে দেই। যদিও এই দুই বছর রাস্তায় ইট-বালি ফেলা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা তো শুধু আমার কারণে ক্ষতি হয়নি। বিল্ডিং (ভবন) করার জন্য এই রাস্তা দিয়ে যারা ইট, বালু, রড, সিমেন্ট নিয়েছেন, তাদের কারণেও রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।
জনদুর্ভোগ লাঘবের বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। পরে এলজিইডি থেকে সম্পূর্ণ রাস্তাটি পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হলে উন্নয়ন তহবিলের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স’মিলের কারণেও মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তা পাকাকরণের বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থাপন করবো।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি স’মিলের মালিকের সাথে কথা বলেছি। তিনি রাস্তা খানাÑখন্দের কথা স্বীকারও করেছেন। আমি তাকে নির্দেশনা দিয়েছি, স’মিলের কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে সংস্কার করে দিতে হবে। আর তিনি যদি রাস্তাটি সংস্কার না করে দেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক তাপস শীল বলেন, রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ। যদি স’মিলের কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত এবং শিক্ষার্থী, সেবাগ্রহিতা ও জনসাধারণের চলাচলের বিঘ্ন ঘটে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৩০ অক্টোবর, ২০২৪।