হাজীগঞ্জে ভেকুর দাপটে ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি

ধূলাবালিতে ফসল, গাছপালা ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এক সময়ে ট্রাক্টরের রাজত্বে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ক্ষত-বিক্ষত হতো। তৎকালীন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের (বর্তমানে এডিশনাল ডিআইজি) এই যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আর এখন ভেকু নামক অপর এক যন্ত্রদানবের থাবায় ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি। আইন লঙ্ঘন করে উপজেলার বিভিন্ন কৃষি মাঠ থেকে ভেকু দিয়ে নির্বিচারে মাটি কাটা হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির মাঝখান থেকে অত্যাধুনিক ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। সে মাটির বেশিরভাগ যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। যেই জমির উপরিভাগে ধান বোনা হতো সে জমিতে এখন বিশাল আকারের গর্ত। এতে করে ওই জমিগুলো যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে এসব ফসলি জমি। দেশের আইন অনুযায়ী ইটভাটার জন্য কৃষি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।
এর মধ্যে হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের আলীগঞ্জ-হাড়িয়াইন সড়কের হাটিলা পশ্চিম মাঠে গত একমাস যাবৎ ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ওই সড়কের পূর্ব পাশের মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ২০ হাজার জরিমানা করার দুই দিন মাটি কাটা বন্ধ থাকে। এরপর আবার শুরু হয় মাটি কাটা। সাথে নতুন করে ওই রাস্তার পশ্চিম পাশের মাঠে শুরু ভেকু দিয়ে মাটি কাটা। যে মাটি যাচ্ছে কাঁঠালির ইট ভাটায়।
এছাড়া গত রোববার বেলচোঁ বাজার হয়ে শমেষপুর সড়কে ট্রাকের পর ট্রাক মাটি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এসময় ট্রাকের চালকদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কৃষি মাঠ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এবং তা যাচ্ছে ইট ভাটায়। কিন্তু কোন মাঠ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এবং তা কোন ইট ভাটায় যাচ্ছে, তা তিনি (চালক) জানাতে অপারগ ছিলেন। ওই সময়ে ব্যস্ততার কারণে, মাটি কাটার স্থল ও সংশ্লিষ্ট ইটভাটায় যাওয়া হয়নি এই প্রতিবেদকের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভেকু দিয়ে কৃষি জমি কাটা মাটি বেশিরভাগ যাচ্ছে ইট ভাটায় পাশাপাশি নতুন বাড়ি স্থাপনে ভিটি বাঁধা, খাল, ডোবা-নালা, পুকুরও ভরাট করা হচ্ছে। এতে দিন দিন কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি খাল, ডোবা-নালা ও পুকুরও ভরাট হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নস্ট হচ্ছে। তাই ট্রাক্টরের মতো কৃষি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হোক। প্রশাসনের কাছে এমন দাবি জানিয়েছেন লোকজন।
হাটিলা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান মুন্সী ও সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম সিফাত জানান, আমাদের পাশে বিশালাকৃতি কৃষি মাঠ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। চলিত বছর যে জমিতে ইরি-বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে, সেই জমি থেকেও দিনের পর দিন ভেকু দিয়ে মাটি কাটছে। এছাড়া মাটি পরিবহনকালে পাকা সড়কের ক্ষতি হচ্ছে আর ধুলাবালিতে সড়কের পাশের বসতি ও গাছপালা নষ্ট হচ্ছে।
ওই গ্রামের একজন কৃষক জানান, এক জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাকে পরিবহনের কারণে আরো দশটা জমি নষ্ট করছে তারা। আমাদের (কৃষক) বাঁধা উপেক্ষা করে জমির উপর দিয়ে অবাধে মাটি নিচ্ছে। এতে করে ধূলা-বালিতে আশপাশের ফসলি জমি, ফসল, গাছপালা ও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। গত মাসিক সভায় এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি। কৃষকরা যাতে তাদের জমি থেকে এভাবে মাটি বিক্রি না করে এজন্য চেয়ারম্যানরা জমির মালিকদের বুঝাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, ভেকু বন্ধে আমরা সহসা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।

১১ জানুয়ারি, ২০২৩।