বিপরীতমুখী যানবাহন দেখা না যাওয়ায় প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বদরপুর এলাকার হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের বাঁক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মোড়ে বিপরীতমুখী গাড়ি দেখতে না পাওয়া, সড়কে কোন গতিরোধক না থাকা, যানবাহনের দ্রুতগতি এবং ওভারটেকিং ও সংকীর্ণ রাস্তায় বাঁকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বদরপুরে এলাকায় এ বাঁকটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। নতুবা যেকোনো দিন ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমন আশংকায় স্থানীয়দের।
জানা গেছে, আগে নোয়াখালী জেলার পশ্চিম এবং লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্ব ও উত্তর উপজেলার লোকজনকে ফেনী, পরবর্তী সময়ে লালমাই হয়ে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে হতো। কিন্তু রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর আঞ্চলিক সড়কটি নির্মিত হওয়ার পর ওইসব এলাকার লোকজন এ পথেই চলাচল করেন।
সড়কটিতে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও পণ্য নিয়ে শত শত যানবাহন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলছে। এতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হয়েছে। তবে যোগাযোগ খাতে সড়ক পথের পরিধি বাড়লেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধিকতা কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি উপেক্ষিত। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।
হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বদরপুর এলাকায় বাঁকটি ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার ফাঁদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মোড়ে বিপরীতমুখী গাড়ি দেখতে না পাওয়া, সড়কে কোন গতিরোধক না থাকা, যানবাহনের দ্রুতগতি এবং ওভারটেকিং ও সংকীর্ণ রাস্তায় বাঁকের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমনকি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
কারণ, উত্তর দিক হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের কাঁঠালি পার্ক থেকে দক্ষিণ দিক বদরপুর মোড় ঘুরে ইউটার্ন অর্থাৎ একটি বাঁকে উত্তর দিক থেকে সরাসরি পশ্চিম দিকে সড়কটি চলে গেছে। আবার সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও চৌরাস্তা থেকে বদরপুর মোড় ঘুরে ওই একটিই ইউটার্ন অর্থাৎ সড়কটি পূর্বদিক থেকে সরাসরি উত্তর দিকে চলে গেছে।
এর মধ্যে সড়কের উত্তর পাশ, বাঁক এলাকায় পাওয়ার গ্রীড ও মোড়ে একটি পাকাভবনের থাকায় হাজীগঞ্জমুখী যানবাহনের চালকেরা কচুয়ামুখী উত্তর দিকের যানবাহন দেখতে পায় না। একইভাবে কচুয়ামুখী যানবাহনের চালকেরা হাজীগঞ্জমুখী পশ্চিম দিকের যানবাহন দেখতে পায় না। তাছাড়া মোড়ে নেই কোন চিহ্ন ও গতিরোধক।
এতে দ্রুতগতির যানবাহনগুলো হঠাৎ করে মোড় ঘুরতে গিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন চালকরা। যার কারণে প্রায় সময়, স্থানীয়দের ভাষায় বলতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে কোন না কোন যানবাহন। এদিকে যানবাহনগুলো হঠাৎ করে মোড় ঘোরার কারণে চালক ও যাত্রীসহ মোড়ে থাকা দোকানি, স্থানীয় ও এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন পার করছেন এবং যেকোনো দিন ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, এমন আশংকা করছেন তারা।
সচেতনমহল জানান, সড়ক নির্মাণে সোজা পথকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিপজ্জনক বাঁকস্থলে স্থাপনা নির্মাণ ও বাঁকের দুই পাশে গাছ লাগানো বিরত থাকতে হবে। মোড়ে স্থাপনা থাকলে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং গাছ থাকলে নিয়মিত ডালপালা কেটে দিতে হবে। এছাড়া চিহ্ন ও গতিরোধক স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে বদরপুর মোড়ের ব্যবসায়ী হৈ চৈ ফাস্ট ফুডের স্বত্বাধিকারী সিফাত বলেন, আমরা এখানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, আর ভাবছি, না জানি কখন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার দোকানে প্রবেশ করে! কিছুদিন আগে দুইবার দুইটি গাড়ি মার্কেটের ভিতর এসে পড়ে। এর মধ্যে একটি গাড়ি দোকানের সাটার পর্যন্ত প্রবেশ করে।
কথা হয় কয়েকটি যানবাহনের চালকের সঙ্গে। তারা জানান, এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা কোন গাড়ি দেখা যায় না। তাছাড়া মোড়ের পশ্চিম ও উত্তর দিকে বেশ কিছু পথ (সড়ক) সোজা থাকার কারণে গাড়িগুলো প্রচণ্ড গতিতে আসে এবং হঠাৎ করে সামনে মোড়ের কারণে অনেক চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়।
জসিম উদ্দিন নামের স্থানীয় এক পথচারী বলেন, বাঁকের কারণে এক পাশের গাড়ি অন্যপাশ থেকে দেখা যায় না। যার ফলে, এমন কোনো সপ্তাহ নেই, এখানে দুই/একটি দুর্ঘটনা ঘটছে না। তাই, এলাকাবাসীর পক্ষে তিনি মোড়ে সতর্কতামূলক চিহ্ন ও গতিরোধক স্থাপনের দাবি জানান।
চাঁদপুর সড়ক বিভাগের হাজীগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৫।