সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা বাড়ানো জরুরি : জেলা প্রশাসক
প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
‘দুর্জয় তারুণ্য, বিজয়ের চেতনায় দুর্নীতি রুখবেই’ এ শ্লোগান নিয়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) এর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন, আলোচনা সভা ও প্রদর্শনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।
উদ্বোধন শেষে চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ ও স্বজন-ইয়েস ও ইয়েস ফেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই শ্লোগান নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন শেষে সবাই র্যালি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে। আলোচনা সভা শেষে দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন নয়, সামাজিক সচেতনতাই অধিক কার্যকর-এই বিষয়ের উপর দুর্নীতিবিরোধী প্রদর্শনী বিতর্কে অংশগ্রহণ করে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রত্যেক অফিস প্রধানরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। এদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বিশ্বের যে কয়টি দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে হলে আমাদের দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য জনগণের হয়রানী রোধে ডিজিটাল সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনসাধারণের সেবা আরও সহজ করার জন্য আমরা নাগরিক সনদ প্রণয়ন করেছি। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির জন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যদি আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীও হয় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান শুধু মানসিকতার ব্যাপার। শুধুমাত্র আমাদের মানসিকতাই পারে আমাদেরকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে। আজকের এই আলোচনায় সভায় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন আমরা আশা করি আপনারা তা যতাযথভাবে পালন করবেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বে ৩য় স্থান অর্জন করেছেন। এটি আমাদের জন্য একটি বড় পাওয়া। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা আগে নিজেরা দুর্নীতিমুক্ত হবো তারপর অন্যকে দুর্নীতিমুক্ত থাকার জন্য সচেতন করবো।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গিকার হবে আমি নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবো এবং অপরকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সচেতন করবো।
সনাক সভাপতি কাজী শাহাদাত বলেন, ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর মেক্সিকোর মেরিডাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী ১২৯টি দেশের মধ্যে ৮৭টি দেশ উক্ত সনদটিতে স্বাক্ষর প্রদান করে। স্বাক্ষরের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ও বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে জনসচেতনতা তৈরিতে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশে^র প্রায় সকল দেশেই দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এবং বিশেষ করে সাধারণ জনগণের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০১৩ সাল থেকে ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস’কে সরকারিভাবে স্বীকৃতির ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সরকারিভাবে এই দিবসটি উদ্যাপনের জন্য সরকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে দিবসটি পালন করছে। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার বলেন, আজকের দিনটি আমাদের একটি মাইলফলক। সারাদেশে একযোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। নিজে দুর্নীতিমুক্ত হলেই অন্যকে দুর্নীতিমুক্ত বলা যায়। তিনি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। কারণ তরুণরাই পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দালন গড়ে তুলতে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেরা দুর্নীতিমুক্ত হবো এবং অন্যকে দুর্নীতিমুক্ত হতে আহ্বান জানাবো। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসকে সফল করতে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক), সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
সনাক-চাঁদপুরের সদস্য ডা. পীযূষ কান্তি বড়–য়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাঈনুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সভাপতি কাজী শাহাদাত, চাঁদপুরের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সফিকুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. ইলিয়াছ, জেলা রেজিস্ট্রার মুশতাক আহমেদ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুজ্জামান, ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল কুদ্দুস, দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদা, বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) শেখ মো. ইমরান, সহকারী কমিশনার (এক্সাইজ ও ভ্যাট) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী, দুপ্রক জেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) জিএম মুজিবুর রহমান, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুননবী মাসুম। বক্তারা তাদের নিজেদের দপ্তরকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভা শেষে দুর্নীতিবিরোধী গণসাক্ষরের উদ্বোধন করেন মাননীয় জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। আলোচনা সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের কমিশনারবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, স্বজন-ইয়েস ও ইয়েস ফেন্ডস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ এবং টিআইবি কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন নয়, সামাজিক সচেতনতাই অধিক কার্যকর-এই বিষয়ের উপর দুর্নীতিবিরোধী প্রদর্শনী বিতর্কে অংশগ্রহণ করে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকবৃন্দ।