চাঁদপুরে এ বছর ইলিশের আমদানি তেমন না থাকায় ইলিশ মৌসুমে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। এতে করে অর্ধশত ইলিশের আড়ত ও শত শত ইলিশ ব্যবসায়ী দেশীয় মাছ বিক্রি করে তাদের এ মৌসুমের কিছুটা হলেও খরচ পোষানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানান।
এ বছর সরকার জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ১শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিলো। ১ মে থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও এখনও ইলিশের বাড়ি নামে সরকারিভাবে স্বীকৃত চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে (মাছঘাটে) রূপালি ইলিশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসছে না। আর যে পরিমাণ ইলিশ আসছে তা সাইজে ছোট এবং মূল্য অনেক বেশি। এখন ক্রেতাদের ইলিশের চাহিদা মেটাতে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো আড়ত দখল করে আছে।
শনিবার (১৯ মে) দুপুরে শহরের মাছঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহু শ্রমিক ঘাট সংলগ্ন নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছে। কখন ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসবে ট্রলারগুলো। পাড়েই পড়ে আছে ইলিশ ওঠানামার কাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি টুরকিগুলো। ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় অনেকটা বেকার সময় কাটাতে হয় মাছঘাটে বিভিন্ন কাজে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪শ’ শ্রমিক। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চাঁদপুরের সবচে’ বড় এই মৎস্য আড়তে চলে পাইকারী ও খুচরা ক্রয়-বিক্রয়। গত ১ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। আর এসব ইলিশ বেশিরভাগই আসছে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর এলাকা থেকে। আর কোনো কোনো দিন ভোলা থেকেও প্যাকেট করা ইলিশ আমদানি হয় এই আড়তে।
মাছঘাটের মেসার্স মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া মৎস্য আড়তের ম্যানেজার ফারুক হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও রূপালি ইলিশের আমদানি হচ্ছে না। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ইলিশ আমদানি বাড়বে, কারণ ততদিন পর্যন্ত নদীতে পানি বাড়বে। মেসার্স আব্দুল আজিজ এন্ড ব্রাদার্স মৎস্য আড়তের ম্যানেজার জয়নাল জানান, রূপালি ইলিশের আমদানি খুবই কম। ৩শ’ গ্রাম ওজনের রূপালি ইলিশের কেজি ৩শ’ টাকা, ৫শ’ গ্রামের ইলিশের মূল্য ৬শ’ টাকা, ৭শ’ ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মূল্য ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের ইলিশের মূল্য ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
একই আড়তের আরেক ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরে মূলত দেশীয় প্রজাতির মাছই আড়ত দখল করে আছে। দেশীয় প্রজাতির মধ্যে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা, পোয়া ও তাপসী ৩শ’ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, আইড় মাছ প্রতি মণ ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছই শহর ও গ্রামাঞ্চলের খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিচ্ছেন তাদের স্ব স্ব এলাকায় বিক্রির জন্যে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আসাদুল বাকী জানান, জাটকা নিধন হলেও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি এ বছর ভালভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এখনো রূপালি ইলিশের কাঙ্ক্ষিত দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। তবে বর্ষা মৌসুমেই ইলিশের আমদানি বাড়বে। ইলিশ গভীর পানির মাছ, পানি বাড়লে আমদানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।