ঈদুল ফিতর পালন ও লঞ্চ যাত্রী নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা


ঈদে যাত্রী হয়রাণীর অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ
—————-অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
এস এম সোহেল
পবিত্র ঈদুল ফিতর যথাযথ মর্যাদায় পালন ও লঞ্চ যাত্রী নিরাপত্তার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হবে না। অনুমোদিত হারে যাত্রী হয়ে গেলেই লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করতে হবে। শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে মাদ্রাসা লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের জন্য ওয়ানওয়ে করে দেয়া হবে। ঈদের সময় কোনো রকম হয়রাণী করতে দেয়া হবে না। অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. আনোয়ারুল আজিম, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী, বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ম্যানেজার মো. পারভেজ, লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি মো. বিপ্লব সরকারসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সরকারি বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করা হবে। জেলার সকল সরকারি বেসরকারি ভবনে বিভাগীয় প্রধানের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিশ্চিত করতে হবে। পবিত্র ঈদের দিন নতুন কাপড়ের তৈরি জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার দ্বারা শহরের পৌর পার্ক, শপথ চত্বর, কলেজ মাঠ, পুরাণবাজার ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সজ্জিত করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে শিশু কিশোররা যাতে বড় স্টেশন মোলহেডে আনন্দ করতে পারে সেই জন্য ইলেকট্রিক যে রাইডারটি স্থাপন করা হয়েছে তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন হাসপাতাল, জেলখানা ও এতিমখানায় উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে। পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের দিন আবহাওয়া অনুকুল না থাকলে পৌর ঈদগাহর প্রধান জামাত স্থানীয় চৌধুরী জামে মসজিদ ও কালেক্টরেট জামে মসজিদে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠের পরিবর্তে পুরাণবাজার জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় আয়োজন করা করতে হবে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠের ঈদের জামাত আব্দুল করিম পাটওয়ারী জামে মসজিদে ও সরকারি কলেজ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। আউটার স্টেডিয়ামের ঈদের জামাত নিকটবর্তী গোর-ইগরিবা জামে মসজিদে সকাল সোয়া ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যান্য এলাকার ঈদের জামাত যথারীতি মাঠ সংলগ্ন ও নিকটবর্তী মসজিদে অনুষ্ঠত হবে। আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকলে স্ব স্ব ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন ও ঈদের পরের ৩ দিন মেঘনা নদীতে ছোট নৌকা ও ট্রলারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতে মাইক ও ডেস্কসেট বাজাতে না পারে সেই দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ঈদের জামাতের ইমামতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। ঈদের জামাত কমিটি আলোচনা করে নিরপেক্ষ ও সর্বজন ও সম্মানিত ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করবে। ঈদের জামাতে কেউ যাতে কোন আপত্তিকর বক্তব্য না দিতে পারে সেদিকে জামাত এন্তেজামিয়া কমিটি সতর্ক থাকতে হবে। ঈমামরা খুতবায় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবেন এবং আরবি খুতবার বিষয়বস্তু বাংলায় তরজমা করে মুসল্লিদের শুনাবেন। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রধান ঈদগাহ ও শহরের রাস্তা-ঘাট পৌর এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চাঁদপুর পৌরসভাকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
লঞ্চ ও রকেট ঘাটে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে ২টি টিম মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ রাখা হয়েছে। ঈদে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। মাদ্রাসা ঘাট ও রকেট ঘাটে দায়িত্ব প্রাপ্ত ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে চাঁদপুর মডেল থানা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যোগাযোগ রক্ষা করবে। বড় স্টেশন লঞ্চ ঘাটে স্কাউট সদস্যদের দায়িত্ব পালন করবে। চাঁদপুর হতে বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল তোলা যাবেনা। নৌকা দিয়ে কেউ লঞ্চে উঠানামা করতে পারবে না। রাতে বালুবাহি কোন নৌযান নদীতে চলাচল করতে পারবে না।
কেউ যাতে লঞ্চ চলাচলের চ্যানেলে জাল না পেলে তা নিশ্চিত করাসহ লঞ্চ চলাচলের নিরাপদ রাখার জন্য পুলিশ সুপার, কোস্ট গার্ড কমান্ডার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক বিআইডব্লিউ চাঁদপুরকে ব্যবস্থা গ্রহণকরার জন্য বলা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে স্পেশাল লঞ্চের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্টিমার ও লঞ্চ ঘাটে চুরি, ছিনতাই, চাদাবাজী, পকেটমার, অজ্ঞান পার্টি ও প্রতারকদের তৎপরতা বন্ধে যানজট ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রাখা হবে।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং একটি উদ্ধারকারী জাহাজ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রস্তুত রাখার জন্য বিআইডব্লিউ উপ-পরিচালক চাঁদপুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসা ঘাট ও রকেট ঘাটে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফোর্স মোতায়েনের জন্য কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সকল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্থাগণ স্ব স্ব উপজেলার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে স্থাণীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় গৃহীত কর্মসূচি প্রচারসহ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।