উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

চাঁদপুর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের উপকূলে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকায় উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ আজ মধ্যরাতে বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূল অতিক্রম করবে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা এবং ওই এলাকার দ্বীপ ও চরগুলোকেও ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার উপকূল এবং সেখানকার চর ও দ্বীপগুলোকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ফলে এর বর্ধিতাংশ ইতোমধ্যে স্থলভাগে তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রোববার থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যার বৃষ্টি বাড়তে থাকে। গতকাল সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাস ও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ার কারণে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের মধ্যে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে চলাচলকৃত সকল লঞ্চ বন্ধ করে দেয় চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসাইন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের কারণে আজ ভোর থেকে চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জের মধ্যে ছোট লঞ্চগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বেলায় ১১টায় বন্ধ করা হয় ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চ। এর আগে সকাল ৬টা থেকে সিডিউলে থাকা লঞ্চগুলো চাঁদপুর থেকে ঢাকা উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, চাঁদপুর জেলার ও জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে ৭ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর নদী বন্দর সমূহকে ৩নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে আনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ন কেন্দ্রসহ ৩২৫টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি খাদ্য হিসেবে ২৫ মেট্টিক টন চাল, ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং আজ বিকেলের মধ্যেই শুকনো খাবার এসে পৌঁছবে।

২৫ অক্টোবর, ২০২২।