ফরিদগঞ্জ ব্যুরো :
গ্রামের মানুষের জন্য অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে সহজে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কে অবহিতকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া (পশ্চিম) ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় পরিষদের কনফারেন্স কক্ষে গ্রাম আদালত বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় ইউনিয়ন পরিষদের সব সদস্যবৃন্দসহ এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। চাঁদপুর জেলার ৪৪টি ইউনিয়নে এ মতবিনিময় সভাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা-ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থানীয় সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ সভার আয়োজন করে। বর্তমানে ২৭টি জেলার ১২৮টি উপজেলার অন্তর্গত ১০৮০টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর জেলায় মোট ৫টি উপজেলার (মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়া) ৪৪টি ইউনিয়নে চলতি বছরের শুরু হতে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলার স্থানীয় সরকার-ইউএনডিপি’র ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গ্রাম আদালতের বার্তা দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে সহজে ন্যায়-বিচার পেতে পারে। বিচারের নামে কেউ যেন হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি গ্রাম আদালতের বিচারিক প্যানেলের সকল সদস্যদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় ইউনিয়ন পরিষদে আদালতের মত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদালতগুলোতে এজলাস স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি আদালতে একজন করে আদালত সহকারী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও অত্র প্রকল্প থেকে গ্রাম আদালতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম ও রেজিস্টার প্রদান করা হয়েছে যাতে আদালতের নথি শুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা যায়। গ্রাম আদালতে মামলা খরচ খুবই কম। দেওয়ানী মামলা জন্য ২০ টাকা এবং ফৌজদারী মামলার জন্য ১০ টাকা মাত্র।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে চাঁদপুরের ৫টি উপজেলায় ৪৪টি ব্যাচের মাধ্যমে মোট ৯২৪ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলছে। ইতিপূর্বে জেলা পর্যায়ে মোট ১৭৬ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, ইউপি সদস্য ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত গ্রাম আদালত সহকারীবৃন্দ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়কারী মো. দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের ১২জন সদস্য, ইউপি সচিব মো. ইমাম হোসেন, গ্রাম আদালত সহকারী সোহেল রানাসহ এলাকার প্রায় ৫০ জন গণ্যমান্য ব্যাক্তি।
উল্লেখ্য, এলাকার কতিপয় ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিরোধসমূহের সমাধান এবং গ্রামের দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ -এর ক্ষমতাবলে সরকার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত স্থাপন করেছে।