চাঁদপুরের মেঘনায় জেলেদের উৎপাত হ্রাস

মা ইলিশ রক্ষায় ‘কুতুবদিয়া’ জাহাজ ও পুলিশ ক্যাম্প

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
অসাধু জেলেদের দৌরাত্ম্যে যখন মা ইলিশ রক্ষায় কার্যক্রমকে ব্যাহত করছিলো ঠিক তখনি নৌ-বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জাহাজ ‘কুতুবদিয়া’র মেঘনায় টহলে কিছুটা আশার আলো মিলছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে বসানো হবে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। ফলে দিনে ও রাতে নদীতে এখন আর অসাধু জেলেদের দৌরাত্ম্য তেমন দেখা যাচ্ছে না। তবে টহলের ফাঁকে ফাঁকে এখন নদীতে কেউ কেউ জাল ফেলছে এমন অভিযোগ রয়ে গেছে। তবে তা তুলনামূলক কম বলে জানা গেছে।
এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক গত ১৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করছেন, মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ এবং জনবল কম থাকায় নদীতে অসাধু জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মা ইলিশ নিধন বন্ধে কোস্টগার্ডের আধুনিক জাহাজ ‘কুতুবদিয়া’র মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে বসানো হবে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের পর যোগ দেয় জাহাজ ‘কুতুবদিয়া’।
বর্তমানে চাঁদপুর মেঘনার নৌ-সীমার ৭০ কিলোমিটারে নৌ-বাহিনী ও নৌ-পুলিশের সাথে কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে ‘কুতুবদিয়া’ দিনে ও রাতে টহল জোরদার করছে। এছাড়া জেলা পুলিশের ৫০ জনের ফোর্স চরের তীরবর্তী এলাকায় পাহারাসহ ক্যাম্প পরিচালনা করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে অসাধু জেলেরা এখন অনেকটাই শঙ্কায় আছে। বর্তমানে মেঘনা কিছুটা হলে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর হতে মা ইলিশ রক্ষায় আগামি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা ও জাল ফেলা নিষেধ থাকলে তা আমলে নেয়নি জেলেরা। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেকটাই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে নদীতে জাল ফেলা অব্যাহত রাখে। যদিও গত ২ সপ্তাহে শতাধিকের উপরে জেলে আটক ও ভিন্ন মেয়াদে দণ্ড পেয়েছে। তারপরও তারা প্রশাসনকে দেখে নেয়া হুমকি অব্যাহত রাখছিলো সন্ত্রাসী মনোভাবাপন্ন অসাধু জেলে ও তাদের সহযোগীরা।
এদিকে জেলেদের হাতে অনিরাপদ মেঘনা কিছুটা হলে নিরাপদ হওয়ায় এখন মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম আশার আলো মিলছে। ফলে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব না হলেও কাছাকাছি থাকা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে আগামি ৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ইলিশের উৎপাদন ছিলো ৫ লাখ ১৭ হাজার টন।
ইলিশ গবেষকরা দাবি করছেন, বর্তমান সময়ে সমুদ্র থেকে মা ইলিশ প্রজনন মৌসুম হিসেবে মিঠা পানিতে চলে আসে। তারা নির্ধারিত সময়ে ডিম দিয়ে আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। ফলে এই সময়ে মা ইলিশ নিধন করা মানে অনেকটাই ইলিশ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ফলে সরকার নদীতে ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ইলিশের অভায়শ্রম ঘোষণা ও মা ইলিশসহ জাটকা নিধন বন্ধের ফলে ইতোমধ্যে দেশে ইলিশ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সচেতনমহল মনে করেন, মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের শুরু থেকে নৌ-বাহিনীর জাহাজ এবং কয়েকটি স্থানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলে অভিযানের সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। নাহলে অভিযানের মাঝামাঝি এ ব্যবস্থা নিলে তেমন একটা সুফল পাওয়া যাবে না। এছাড়া অভিযানের সময় জনবল বৃদ্ধি না করা হলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়মিত কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয় তেমনি অভিযানও সফল করা সম্ভব হবে না। অভিযান ঘোষণা দিয়ে ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’-এর মতো হলে তাতে কোন সুফলই আনবে না।