মো. রিয়াদ হোসেন :
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় চিংড়ি রেণু ও বাইলার পোণা শিকারের মহোৎসব চলছে। অবৈধ এ পেশার সাথে ইতোমধ্যে জড়িয়ে পড়েছে চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের শতশত জেলে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওইসব জেলেরা জাটকা, গুড়া চিংড়ি, বাইলার পোনাসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির রেণু পোণা নিধন করছে।
যদিও গত ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বাগদাসহ সব ধরনের চিংড়ি পোনা এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে অন্যান্য মাছের পোনা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরে প্রকাশ্যে চলছে রেণু পোনা নিধন।
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে মেঘনা নদীতে দেদারছে চলছে রেনু পোনা নিধন। নদীতে ৩ প্রকারের জাল দিয়ে (বাতা , সাটিং ও গাদ) ভন্ন প্রজাতির রেনু পোণা অবাদে হচ্ছে নিধন। আর এসব পোণা নিধনের সাথে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী লোকজন। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় প্রভাব খাটিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরাণবাজার ফঁড়ির পুলিশ যেন দেখে না দেখার ভান করছে। এক শ্রেণির অসাধু দাদনদারা শীতের শীযন আসলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেদের দাদনদিয়ে নিয়ে আসে। দিন ও রাতে ২ বার তারা নদীতে গিয়ে মাছ ধরে পুরাণ বাজার হরিসভা রোডের মাসটর বাড়ি ঘাট দিয়ে এ সব মাছ বিক্রি হয়। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বেচাকেনা হচ্ছে।
অসাধু দাদনদারা হচ্ছেঃ মহসিন হাওলাদার, জলিল মিজি, তাহের শেখ,কাসিম ছৈয়াল, ফজল মিজি, সেলিম শেখ, লিটন গাজী, ইছু মিজি, ইউনুছ মিজিসহ আরো অনেকে। এদের নেতৃত্বে নদীতে প্রায় অর্ধশতাধিক জেলে রেণু পোনা নিধন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার হরিসভা এলাকা, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া বাজার, হানারচর ইউনিয়নের হরিনা ঘাট ও হাইমচরের কালীখোলা এলাকায় দেদারাছে নিধন হচ্ছে রেণু পোণা। ওইসব অসাধু জেলেরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই এসব এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত বাইলা ও চিংড়ি গুড়া পাইকারি বিক্রি করছে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন ওইসব জেলেরা মশারির জাল ব্যবহার করায় প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ডিম, রেণু এবং পরিবেশবান্ধব অনেক পোঁকামাকড়। এসব কারনে ইতোমধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের মৎস্য সম্পদ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপরী মাঝে মাঝে রেণু পোনা বিক্রিরস্থানে গিয়ে দাদনদার ও জেলেদের ভয় দেখিয়ে মাছ ও টাকা নেন বলে জানান।
চাঁদপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় বাইলা ও চিংড়ির রেণু পোণার সাথে স্থান ভেদে গলদা চিংড়িও ধরা পড়ছে। এসব পোণা ধরতে গিয়ে অন্যান্য প্রজাতির কমপক্ষে ৩০ প্রজাতির রেণু পোণার সাথে মাছের খাদ্যকণাও ধ্বংস হয়। এতে করে ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে ওইসব রেণু পোনা নিধন বন্ধে আমরা প্রতি বছর মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।