জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনেই
ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের প্রকাশ্য অনৈতিক আর অসামাজিক কার্যক্রম। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে নারী-শিশুসহ সর্বসাধারণ। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না থাকায় বখে যাওয়া এসব তরুণ-তরুণীদের অসামাজিক কার্যক্রম এখন সব ধরনের সীমা অতিক্রম করছে বলে ভুক্তভোগীরা বলে আসছেন। আর এমন অনৈতিক কার্যক্রমের ঘটনা প্রকাশ্যেই ঘটছে খোঁদ চাঁদপুর মডেল থানা আর জেলা প্রশাসকের বাংলোর ২শ’ গজের মধ্যেই।
চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কে অবস্থিত চাঁদপুর প্রেসক্লাব ও চাঁদপুর ল’ কলেজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদী লাগোয়া মাঠেই এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড হরহামেশাই ঘটছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জন্য এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন। আর এসেই তারা দেখতে পান উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের এমন সব প্রকাশ্য অনৈতিক কার্মকাণ্ড। এতে করে তারা পরিবারের কোমলমতী শিশুসহ সব সদস্যদের কাছে পড়েন বিব্রতকর অবস্থায়।
তবে এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাসিন্দারা বলছে, শিক্ষার্থীদের এমন উশৃঙ্খল পরিবেশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এ এলাকাতে বাড়তে থাকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভাসমান পতিতাদের আনাগোনা। ফলে শহরের কিশোর থেকে যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়তই পতিতাদের দিকে পা বাড়াচ্ছে অনৈতিক কাজে। এতে করে সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এসব অসামাজিক কার্যক্রমে বিব্রত ভুক্তভোগীরা বলছে, করোনা মহামারীতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগেই এমন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। আর এসব শিক্ষার্থীদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে শহর কিংবা গ্রামের পরিবারগুলোতে বাড়বে সামজিক অপরাধের মতো ঘটনা। এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
তবে বেশকিছু অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের পাঠদান হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এতে করে প্রত্যেক পরিবারই তাদের আদরের সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন এন্ড্রয়েড মোবাইল হ্যান্ডসেট। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি হোক আর না হোক তাদের একে অপরের পারস্পরিক সামাজিক যোগাযোগ হচ্ছে অতি দ্রুততার সাথেই। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই শিক্ষার্থীরা একে অপরের কাছে আসার সুযোগ পাচ্ছে হরহামেশাই।
অপরদিকে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ এই শীতে শুরুতে বৃদ্ধি পাওয়ায় স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। এতে করে পড়ালেখার চাপ না থাকায় উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট আদান-প্রদানের নামে ঘর থেকে বের হয়ে জড়িয়ে পড়ছে এমন সব অনৈতিক কার্যক্রমে। এতে করে আগামির সম্ভাবনার এই তরুণ সমাজ এখনই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। তাদের এমন কার্যক্রমে সামাজিক শৃঙ্খলা কিংবা শিষ্টাচার লোপ পাচ্ছে প্রকাশ্যেই। যা এক ধরনের আশনিসংকেত মনে করছেন সর্বসাধারণ। সম্প্রতি ঢাকায় এক তরুণী শিক্ষার্থী এ ধরনের এক কাজে গিয়ে ধর্ষিতা হয়ে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছে। যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে।
আগে এমন অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগ ছিলো শহরতলীর বিভিন্ন পার্কের বিরুদ্ধে। সেখানে টাকার বিনিময়ে ও ঘণ্টাভিত্তিক চুক্তিকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দিতো সংশ্লিষ্টরা। এতে করে কিছু প্রবাসী পরিবারের নারীরা এমন কর্মকাণ্ডে জড়াতো বলে চাউর ছিলো। তবে স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে কেবল শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে বিপদগামী হতো। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না থাকায় পার্কসহ শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল আর চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এমন অসামাজিক কার্যক্রম হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
বর্তমানে সবকিছু ছাপিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবন লাগোয়ো প্রেসক্লাব ঘাটে এমন প্রকাশ্য অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে কথা তুলছে অনেকেই। তারা বলছে, এই পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্ন এই শহরকে কেবল সামাজিক অবক্ষয়ই বাড়চ্ছে না বরং প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এসব শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং তাদের সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণে পুলিশের উদাসীনতার সমালোচনা করছে অনেকেই। তবে ভুক্তভোগীরা আশা করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো নবাগত নারী জেলা প্রশাসক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন পরিস্থিতি উত্তরণে।
১৪ জানুয়ারি, ২০২১।