শাহ্ আলম খান
চাঁদপুরে আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া মুরগির দাম শবে-বরাতের আগে আরো এক দফা বেড়েছে। চাঁদপুরের বাজারগুলোতে একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও লাল লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
রোববার (২৮ মার্চ) শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।
পাল বাজার ব্যবসায়ীরা জানান, গত শনিবার (২৭ মার্চ) ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। আর পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, দু’দিন পরই শবে বরাত। আর শবে বরাতে মুরগির চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণেই এখন মুরগির দাম বেড়ে গেছে। শবে বরাতের আগের দিন মুরগির দাম আরো বাড়তে পারে।
ওয়ারলেস বাজারের ব্যবসায়ী বাচ্চু বেপারী বলেন, মুরগির দাম আগে থেকেই বাড়তি। তবে মাঝে দাম কিছুটা কমে কয়েকদিন ধরে বয়লার মুরগির কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। পাকিস্তানি সোনালী মুরগির কেজি ১৬০ টাকা থেকে কমে ১৩০ টাকা হয়েছিল। কিন্তু শবে-বরাতের কারণে এখন আবার মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
মুরগি ব্যবসায়ী আরো বলেন, মুরগির দাম নির্ভর করে পাইকারি বাজারের ওপর। গতকাল বয়লার মুরগির কেজি আমরা ১৫০ টাকায় বিক্রি করলেও আজ কেনাই পড়েছে ১৫০ টাকা। এই দামে মুরগি কিনে ১৬০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। আজ তাও ১৬০ টাকা কেজি বয়লার মুরগি পাওয়া যাচ্ছে, দু’দিন পর আরও বেশি দামে ব্রয়লার কিনতে হবে।
বিপণীবাগ বাজারে মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, শবে বরাতের আগে মুরগির দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক বিষয়। আর শবেবরাতের আগে শেষ শুক্রবার গেছে। গত শুক্রবার-শনিবার দুইদিন সরকারি ছুটির মধ্যে আজ আবার হেফাজত ইসলামের হরতাল স্বাভাবিকভাবেই আজ চাহিদা বেশি। এ কারণে দামও বেশি।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, গতকাল আমরা লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি করেছি ১৯০ টাকা। আর আজ কিনেই এনেছি ১৯০ টাকা কেজি। কোনো কোনো ক্রেতা এসে ১৯০ টাকা দাম বলে ঘুরে যাচ্ছে। লোকসান দিয়ে তো আর বিক্রি করা সম্ভব না। আজ যারা ২০০ টাকা কেজি লেয়ার মুরগি কিনছে না, তারাই দু’দিন পর ২৩০ টাকা কেজি কিনবে। কারণ শবে বরাতের আগের দিন মুরগির দাম আরো বাড়বে বলে আমাদের ধারণা।
শবে বরাতকে সামনে রেখে মুরগির দাম বাড়লেও স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজের দাম। হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পর গত সপ্তাহে দাম কমা পেঁয়াজের দাম নতুন করে আরও কমেছে। এতে দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা। এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজের পাশাপাশি স্বস্তি দিচ্ছে রসুন, আদা, জিরা এবং ডিম। ফার্মের মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি আদা। জিরা পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বিপণীবাগ ব্যবসায়ী বলেন, কিছু দিন আগে হুট করে পেঁয়াজের দাম যেভাবে বেড়েছিল, আমরা ধারণা করছিলাম রোজার আগে পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম কমেছে। ৫৫ টাকা থেকে কমতে কমতে পেঁয়াজের কেজি এখন ৩৫ টাকায় নেমেছে। শুনছি সামনে দাম আরও একটু কমতে পারে।
একই বাজারের ব্যবসায়ী শামীম ঢালী বলেন, আগামি মাসের শুরুতেই ভালো মানের পেঁয়াজ ওঠা শুরু হবে। এখন বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজের সরবরাহ এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। সে হিসেবে সামনে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।
এদিকে, শাক-সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে শশার দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শশার দাম বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে পটল ও ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বেগুনের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজরের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপির ও লাউয়ের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস।
এইদিকে, গত এক সপ্তাহে বাজারগুলোতে তেল, চিনি, ডাল, আটা ও ময়দাসহ ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলের ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৬১০ থেকে ৬৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোলা পাম অয়েলের দাম ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ১০৭ থেকে ১১২ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। আর ১০৫ থেকে ১১০ টাকা লিটার বিক্রি হওয়া সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৫ টাকায়। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্যাকেট আটার দাম গত এক সপ্তাহে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এতে এই পণ্যটির কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়।
গত এক সপ্তাহে মাঝারি দানার মশুর ডালের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এতে এখন মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে দেশি শুকনা মরিচ, চিনি, গুঁড়া দুধ। দেশি শুকনা মরিচের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৯০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়ে লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে চিনির দাম বাড়তি থাকলেও গত এক সপ্তাহে আরো বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহে ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। এর সঙ্গে ডানো গুঁড়া দুধের দাম দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৬১০ থেকে ৬৩০ টাকা এবং মার্কস গুঁড়া দুধ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে কেজি ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ৫২ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম গত এক সপ্তাহে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে চাল ব্যবসায়ীরা। মাঝারি মানের চালের সঙ্গে কমেছে মোটা চালের দামও। মোটা চালের দাম ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা।
আর তেজপাতার ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ দাম কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
এইদিকে বিপণীবাগ বাজারে আরও বেড়েছে মাছের দাম। কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। মাছের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের বেশ ক্ষোভ দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্র-শনিবার থেকে হঠাৎ মাছের দাম বেড়েছে। মাছের বাজারে কিছু বৈচিত্র্যও এসেছে ফরমালিনমুক্ত প্রমাণ করতে বিক্রেতাদের চেষ্টা দেখে। ডালায় রুইসহ কয়েক প্রকারের মাছকে নড়তে-চড়তে দেখা গেছে।
দু’তিনদিন আগেও যে রুই বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে, গতকাল তা কিনতে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে। এভাবে সব মাছের দামই ছিল বেশি। প্রতি কেজি ছোট আকারের তেলাপিয়া ১২০-১৩০, মাঝারি আকারের তেলাপিয়া ১৬০-১৭০, পাঙাশ ১২০-১৩০, বোয়াল ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ছোট টেংরা ও মলা মাছ ৪০০ টাকা, চাষের কই আকারভেদে ২০০-৩০০ ও মাঝারী আকারের চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের (৪৫০ গ্রাম ওজন) একটি ইলিশ ৩০০-৩৭০ টাকা এবং প্রতি কেজি কাতলা আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত হাকেন বিক্রেতারা।
দাম কতটা বেড়েছে জানতে চাইলে বিপণীবাগ বাজারের নিয়মিত ক্রেতা নাজির পাড়া বাসিন্দা মামুন দেওয়ান বললেন, কাতল মাছের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কমপক্ষে ১০০ টাকা বেড়েছে।
ওই বাজারের মাছ বিক্রেতা সুনীল দাস বললেন, মাছ কিনা পড়ছে বেশি দামে, কেমনে কমে বেচুম? মাছের বাজারে ফরমালিনের ব্যবহার কমে আসা দাম বৃদ্ধি রে ভাই।
অপরদিকে মাছ ব্যবসায়ী মালেক বেপারী বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমাদের দেশী কোনো মাছে ফরমালিন নেই। মাছের দামের চিত্র শহরের অন্যান্য বাজারেও প্রায় একই।
বাজারে উপস্থিত ক্রেতাদের সাথে আলাপ করলে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা হালিমা বেগম, গৃহিণী নাজমা বেগম, নাজির পাড়ার বাসিন্দা মনি আক্তার, সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় বাঁধন মজুমদার ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী সোহেল আরমান বলেন, আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের আয়-রোজগার খুবই সীমিত, আমাদের এই সামান্য আয়ের উপর চলতে হয় মাস। তার মধ্যে আবার ঘর ভাড়া দিতে হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে যদি জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়তে থাকে, আমাদের তো আয়ের উৎস বাড়ে না।
২৯ মার্চ, ২০২১।
- Home
- অর্থ বানিজ্য
- চাঁদপুরে আবারো বেড়েছে মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম