একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ইল্শেপাড় রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠে তারা। প্রায় এক দশক পর সারা দেশের মতো চাঁদপুরের প্রার্থীরাও এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাদের কেউ কেউ ভোটারদের বলছেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কথা, আবার কেউ বলছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা। প্রার্থীরা যে যাই ভাবুক ভোটাররা ভাবছে তাদের ভোটাধিকারের কথা। এ নিয়েই ভোটার ও সর্বসাধারণের মাঝে বইছে নির্বাচনী ঝড়। এই যখন রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা, ঠিক তখন ভোটের সমীকরণ বলছে এবারের ভোট যুদ্ধ হচ্ছে চাঁদপুরে দুই শিবিরের জনপ্রিয়তার লড়াই।
এ লড়াইয়ে জিতবে কারা? এমন প্রশ্নের উত্তর যখন ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ফলফল, তখন আগাম ধারণা কতটুকু যৌক্তিক- তাই ভাবছে আমজনতা। তবে চাঁদপুরে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ঐতিহ্য বেশ মজবুত হওয়ায় স্বভাবতই এগিয়ে থাকবে তারাই। তবে এমন জনপ্রিয়তা গত এক দশক পর কতটুকু বহাল আছে তা নিশ্চিত হতে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সবাইকেই।
এমন সমীকরণে আবার একমত নন বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা। উন্নয়নের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা। তাদের এমন ধারণার পেছনে যৌক্তিকতা অনেক গভীর। ডিজিটালে অগ্রগতি আর অবকাঠামোগত উন্নয়নেই তাদের বিশ্বাসের মাত্রা এগিয়ে রাখছে। তবে ভোটারদের মনোভাব সেই বিশ্বাসে কতটুকু তাও আগাম ধারণা থাকছে না এই মুহূর্তে।
তবে চাঁদপুরের ৫টি নির্বাচনী আসনে অংশ নেয়া মহাজোটের ৫ প্রার্থী আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৫ প্রার্থীর মাঝে নতুন মুখ ৫ জন। এই নতুন ৫ প্রার্থীরা হলেন চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন, চাঁদপুর-২ বিএনপির ড. জালাল উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, চাঁদপুর-৩ আসনে বিএনপির শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ও চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপির আলহাজ এমএ হান্নান। এবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা।
অপর ৫ প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের কেউ হয়েছেন সংসদ সদস্য আবার তাদের কেউ মন্ত্রীও। এই ৫ প্রার্থী এবার তাদের ইমেজ রক্ষার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন; চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, চাঁদপুর-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও চাঁদপুর-৫ আসনের সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে তারা জাতীয়ভাবেই পরিচিত। অপর প্রার্থীরা এখনো জাতীয় সংসদ সদস্য হতে পারেননি।
সাবেক এই ৩ মন্ত্রীর সাথে নবাগত আরো ২ প্রার্থী আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচন করলেও চাঁদপুর-৪ আসনের প্রার্থী সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ইতোপূর্বে ২ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কেবলমাত্র একবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৫ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়র মমিনুল হক।
নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার দৌঁড়ে বিএনপির প্রার্থীরা নতুন হলেও রাজনীতির মাঠে তারা অনেকটাই প্রবীণ। তাদের প্রত্যেকের আছে গত এক যুগের অভিজ্ঞতা। ভোটার আর আম-জনতার সাথে তারা ছিলেন পরিচিত মুখ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে। এবার তাদের পরীক্ষা পরিচিত আর গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে তার কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অপরদিকে ভোটারদের ভাবনা জনপ্রিয়তার প্রশ্নে কে থাকবে এগিয়ে তা তারা কেবল ভোটের দিনই প্রয়োগ করতে চান। তবে তার আগে তারা পরিবর্তন করতে চান ভোটাধিকার হরনের রাজনীতির সংস্কৃতি। তাদের মনে এই সংস্কৃতির ক্ষত বেশ গভীর’ই। আবার গত এক দশকে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন তাদের সামনেই নগ্নভাবেই স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার হরণ করছে যারা, তাদেরও ছিলেন সর্বমহল।
ফলে ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রশ্নে এখনো ভয় কাটছে না ভোটারদের। কারণ ভোটাধিকার হরণকারীরা এখনো ভোটের মাঠে তাদের আধিপত্য বিস্তারের দৌড়-ঝাঁপ অব্যাহত রাখছেন। তাদের এই দৌড়-ঝাঁপ ফের ভোটাধিকার হরনের ইঙ্গিত বহন করলেও ভোটারদের মাঝে সাহসও লক্ষ্য করা গেছে। তারা ভাবছে আর নয় অধিকার হারানোর ভয়। এবার অধিকার জয়ের পালা।
স্থানীয় ভোটারদের এমন সাহসী মনোভাবই এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচান চাঁদপুরের ৫টি আসনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এমন ইঙ্গিত কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা কেবল নির্ভর করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা আর সততার উপরে। ভোটাররা তাদের প্রতি আস্থা রাখতে চান তাদের প্রতি এই দেশের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী হিসেবেই। সে হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন বাস্তবায়নে তাদের পাশে থাকলে উড়ে যাবে ভোটাধিকার হরনের ভয়। আর জয় হবে গণতন্ত্রের।
চাঁদপুরে গণতন্ত্রের জয়ের যেমন বিকল্প ভাবছে না আমজনতা ঠিক, তেমনি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ১০ প্রার্থীর জনপ্রিয়তাও প্রমাণ করতে চান ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই তারা। তাই এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাঁদপুরে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজেট আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মর্যাদার লড়াই। ঠিক তেমনি লড়াই ভোটারদের ভোটাধিকারের…!