চাঁদপুরে এক রাতে ১৫ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি


স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরে গত মঙ্গলবার রাতে বড় স্টেশন মাছের আড়ৎ ও বিভিন্ন হাট-বাজারে দিনের চাইতে রাতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতার ভিড় ছিল বেশি। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ইলিশ বেচা-বিক্রি চলতে দেখা গেছে। রাতেই কয়েক কোটি টাকার ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইলিশ ব্যবসায়ী বাবুল হাজি জানান, মঙ্গলবার দিনে ও রাতে কমপক্ষে ১৫ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এতে করে কয়েক কোটি টাকার আমদানি হয়েছে। মঙ্গলবার চাঁদপুরের যে ইলিশের হাটে হাজার-হাজার মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। সে ইলিশের হাট গতকাল বুধবার ছিল মৎস্য ও মানুষশূন্য। তবে চাঁদপুর ও বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ মনে করে চড়া দাম দিয়ে ইলিশ ক্রয় করে নিজেরা প্রতারিত হয়েছে।
শেষ মুহূর্তে দাম কমে পাওয়ার আশায় অনেক ক্রেতাই ইলিশ ক্রয় করতে এসেছেন বলে একাধিক ক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
চাঁদপুরে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একদিনে ৫ বার ইলিশের হাটে দর পতন ও বৃদ্ধি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে। ইলিশ ব্যবসায়ী নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, শুধুমাত্র মঙ্গলবার রাতেই প্রায় ১০ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ঘাটে ৫০টি ইলিশের আড়তে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মৎস্য ঘাটে ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। এরই মধ্যে রাত ৯ট থেকে ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের পাইকার, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা কম দামে ইলিশ ক্রয় করতে মাছের আড়তে আসায় হাজার-হাজার ক্রেতাদের ভিড়ে ইলিশের ঘাটের আড়তগুলোতে হাটার জন্য তিল ধারণের জায়গা ছিল না। এরই মধ্যে শত-শত মোটর সাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় ছিল প্রচন্ড যানজট। ৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের ১ থেকে দেড় ঘণ্টা জ্যামে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থান ও সাগরের ইলিশে রাতে মাছ ঘাট মাছে একাকার হয়ে পড়ে। যার ফলে এসব ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় চলে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত। গভীর রাতে সাধারণ ক্রেতা না থাকায় শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ী, শহরতলীর ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন উপজেলার পাইকাররা রাতে ইলিশ ক্রয় করেছে একেবারে কমমূল্যে। ১ কেজির উপরের সাইজের যে ইলিশের মণ ছিল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সেই ইলিশ রাতে বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। যে ইলিশ ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের দিনে বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধরে সেই ইলিশ রাতে পাইকারী বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা দরে। ছোট সাইজের ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে দিনে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা দরে। সেই ইলিশ রাতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। শেষ রাতে যেসব সাধারণ ক্রেতা ইলিশ ক্রয় করেছে তারা কম মূল্যে ইলিশ ক্রয় করার সুযোগ পেয়েছে। ইলিশ ক্রয় করা ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা এসব ইলিশ ক্রয় করে বরফজাত করে ইলিশ নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। এছাড়া শহরের হাজার হাজার ক্রেতা ইলিশ ক্রয় করে তাদের ফ্রিজে রেখেছে বলে অনেক ক্রেতার কাছ থেকে জানা যায়।
সকালে ইলিশের দাম ছিল মোটামুটি কম। দুপুরে দাম বেড়ে যায় অনেক গুণ বেশি। আবার বিকেলে ইলিশের আমদানি হওয়ায় দাম একেবারে কমে যায়। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইলিশের হাটে ইলিশ কম থাকায় দাম অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যাওয়ায় ক্রেতারা বেশি দামে ইলিশ ক্রয় করতে হয় চড়া মূল্যে। রাত ৯টার পড়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ১০/১২ ট্রলারে করে প্রচুর ইলিশ আমদানি হয়। চাঁদপুর ইলিশ আড়তের ব্যবসায়ীরা কোন উপায় অন্তর না পেয়ে একেবারে পানির দরে ইলিশ বিক্রি করে তাদের বেপারীদের চালান রক্ষা করেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

১০ অক্টোবর, ২০১৯।