
গ্রামাঞ্চলে মানছে না হোম কোয়ারেন্টাইন
ইল্শেপাড় রিপোর্ট
করোনাভাইরাস রোধে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহ থেকে চলমান অঘোষিত লকডাউনের কারণে জনজীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে, ঠিক তখনি প্রশাসন হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা অব্যাহত রাখছে, যা প্রশংসনীয় হচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিদের সীমিত পরিসরে অংশ নেয়ায় হতদরিদ্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
তবে চাঁদপুরে সরকারি সিদ্ধান্তমতে সারাদেশের মতো প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনসহ সর্বসাধারণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের লোকজন। অপরদিকে সড়কে যানবাহনশূন্য থাকায় ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যেতে পারছে না তারা। এদিকে জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষ মানছে না হোম কোয়ারেন্টাইনের বিধি নিষেধ। তারা কাজের সন্ধানে ও নিজ নিজ ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালানার জন্য হাট-বাজারমুখী হচ্ছে প্রতিদিনই।
এসব রোধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রথমদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও বর্তমানে তা নেই। ফলে বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছে না গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তারা পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার জন্য কাজের বা নিজ নিজ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে দেখা গেছে।
এদেকে খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশাসন প্রত্যেক উপজেলায় ন্যায্যমূল্যের সততা স্টোর, অসহায়, দুঃস্থ, দিনমজুরদের জন্য খাদ্য সরবরাহ, চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে অর্ধেক মূল্যে ঔষধ বিক্রি, চাঁদপুর শহরের ৪টি হোটেলে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা এবং পুলিশ অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এমন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানায় সর্বসাধারণ। তবে এসব ব্যবস্থায় প্রশাসনের একক প্রচেষ্টা থাকায় বিপুল পরিমাণ গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য সর্বসাধারণ তৃণমূল পর্যায়ের, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের তৎপরতা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এছাড়া এমন দুর্যোগকালীন সময়ে জেলার ৫ জন সংসদ সদস্য মানুষের পাশে না থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছে পুরো জেলাবাসী।
এদিকে করোনায় কর্মহীন মানুষদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ বিতরণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শহর ও গ্রামে খাদ্য সমস্যায় পড়া বিপুল কর্মহীনদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি গতকাল সোমবার সব জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
কর্মহীন শ্রমজীবীরা বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হলে বিপুলসংখ্যক মানুষ সুবিধাবঞ্চিত হবে। তাদের দাবি তৃণমুলের জনপ্রতিনিধিরা রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ায় তারা সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনা করে সেবা প্রদান করে থাকে। যার কারণে সব সময় বিপুল পরিমাণ মানুষ সুবিধাবঞ্চিত থাকে, জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। এজন্য তারা প্রশাসনের মাধ্যমেই তা করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমন আগামি সপ্তাহে কম-বেশি বাড়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন মহল থেকে। এজন্য আগামি সপ্তাহে আরো সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ৪ এপ্রিলের পর সরকারি ছুটি বাড়ানো হবে কি-না তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জানানো হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে জানানো হয়েছে।
করোনা সনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর দেশে ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশত রোগী সনাক্ত ও ৫ ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে করোনা বিষয়ক সরকারের মুখপাত্র আইইডিসিআর’র পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তবে চাঁদপুরে এখনো কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে। যার কারণে চাঁদপুরে করোনা ঝুঁকি অনেকটাই কম বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করছে।
করোনা মোকাবেলা প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, প্রাথমিকভাবে উপজেলা সদরে সততা স্টোর চালুর পর অচিরেই উপজেলা সদরে আরো একটিসহ বাকি ১৫টি ইউনিয়নে সততা স্টোর চালু করার জন্যে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে দুঃস্থ ও অতিদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সামান্য চেষ্টা অব্যাহত হিসেবে শহরের কোড়ালিয়া সরকারি পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৩শ’ অতিদরিদ্র মানুষের হাতে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, নেতিবাচক নয়, পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান জানিয়েছে, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে খেটে খাওয়া হতদরিদ্র লোকজনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা, ঔষধ প্রদান, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে হতদরিদ্র মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিনা পয়সায় যে ৪টি হোটেলে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো হলো- আল-আরাফ হোটেল, ক্যাফে ঝিল হোটেল, চাঁদপুর হোটেল ও আজিজিয়া হোটেল। জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে চাঁদপুর শহরের অভিজাত এ ৪টি হোটেলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিদিন দুঃস্থ ও অসহায় মানুষ বিনা পয়সায় তাদের হোটেলগুলোতে খেয়ে যাবে। দিনশেষে খাবার বিল পরিশোধ করবেন জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান নিজেই।