চাঁদপুরে ছাত্র-জনতার বিজয়োল্লাস

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে সদ্যবিদায়ী সরকার প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগের সংবাদের সাথে সাথে জেলাজুড়ে ছাত্র-জনতার বিজয়োল্লাসে মেতে উঠে হাজার হাজার মানুষ। পুরো চাঁদপুর যেন হয়ে উঠে এক ঈদের আমেজ। সাধারণ মানুষ নেচে-গেয়ে উৎসব এবং মিষ্টি বিতরণ করে। এই উৎসবে সাধারণ মানুষ বলতে থাকে- ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গত দেড় দশকে দেশটাকে আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশালে পরিণত করছে। এতে করে বাকস্বাধীনতাসহ ব্যক্তিগত অধিকার হারিয়েছে দেশের সর্বস্তরের জনগণ। কেবল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই দেশের মালিক ছিলো। আজ থেকে এই মুক্ত দেশের মালিক দেশের সব জনগণ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গত একমাস ধরে চলে সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনপীড়নের মাধ্যমে সরকার ছাত্রজনতার উপর গুলি চালালে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। তারপর শিক্ষার্থীরা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে ৯ দফা দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে গণআন্দোলনকে বন্ধ করতে দেশব্যাপী কার্ফিউ জারিসহ ইন্টারন্যাট বন্ধ করে দেয় সরকার।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের এই ৯ দফা হয়ে যায় সরকার পতনের একদফা দাবি। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৫ আগস্ট) ছিলো শিক্ষার্থীদের গণভবনমুখী লংমার্চ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী লংমার্চ করার আগেই বেলা দুইটায় দেশব্যাপী চাউড় হতে থাকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করছে। এমন সংবাদের সাথে সাথে ঢাকার সাথে চাঁদপুরের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। জেলার রাজপথে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উৎসব থেকে বলতে থাকে আজ থেকে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ শুকরিয়া জানিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ ও ‘স্বাধীন’ লেখে মত প্রকাশ করে জানান দেয়।
তবে বিকেল যতই বাড়তে থাকে ততই ঘটতে থাকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর ঘৃণা। আর গত দেড় দশকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজদের নিপীড়নের ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ি কিংবা অফিস আদালতে হামলার মধ্যে দিয়ে। তবে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিলেও বিক্ষুব্ধ কর্মী ও সমর্থকরা ব্যাপক ভাংচুর চালায় জেলার বিভিন্ন স্থানে। এতে সাধারণ মানুষদের অংশ নিতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর শহরের অভ্যন্তরে যেখানে যেখানে হামলার খবর পাওয়া গেছে, তা হলো সদ্যবিদায়ী সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির শহরস্থ কদমতলার বাসায় আগুন, তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর পরিচালিত জিম সেন্টার ভাংচুর ও লুট, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারীর বাসায় হামলা ও ভাংচুর, চাঁদপুর পৌর মেয়র জিল্লুর রহমানের বাসায় হামলা ও ভাংচুর, চাঁদপুর পৌরসভায় হামলা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমানের আদালতপাড়াস্থ বাসায় হামলা ও ভাংচুর, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোতালেবের ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুর, শহরের শপথ চত্বর পুলিশ বক্স ভাংচুর, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু পাটওয়ারীর অফিস ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া শহরের বড়স্টেশন এলাকার রেলওয়ে জিআরপি থানায় আগুন দেয়ার খরব পাওয়া গেছে।
এছাড়া চাঁদপুর পুরাণবাজার কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের বাসায় হামলা ও ভাংচুরসহ আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার বড় ছেলে নায়ক শান্ত খান মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদে বিক্ষুব্ধদের উপর সেলিম খান গুলি চালালে গণপিটুনিতে বাবা-ছেলে প্রাণ হারায়।
এছাড়া কচুয়া থানায় কর্মরত বহুল আলোচিত পুলিশের এসআই মামুনকে গণপিটুনি দেয় বলে জানা যায়। ঐ গণপিটুনিতে মারা যায় মামুন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় সেতু ভবন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) হামলার ঘটনায় গত এক সপ্তাহে কয়েক শতাধিক সাধারণ মানুষকে আটক করে লাখ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। গতকাল বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশদের খুঁজতে গেলে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

০৬ আগস্ট, ২০২৪।