মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চাঁদপুরে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হাইকোর্ট কর্তৃক নিষিদ্ধ সরিষার তেল, হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, স্পেশাল ঘিসহ দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের এসব নিম্নমানের পণ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকায় জেলা এবং উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে এসব পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার নামে সরকারি যে সংস্থাটি আছে সেটি এ বিষয়ে কোন কার্যক্রমই করছে না।
তবে হাইকোর্ট কর্তৃক ৫২টি নি¤œমানের পণ্যকে নিষিদ্ধ করা হলেও, আমাদের এ অঞ্চলে বাঘাবাড়ির স্পেশাল ঘি, তীর, পুষ্টি ও রুপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, ড্যানিশ, প্রাণ, ফ্রেস ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, এসিআই পিওর ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া, প্রাণ ও ড্যানিস ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, এসিআই ও মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মধুবন ও অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস পাওয়া যায়। যা এখনো মুদি এবং ডিপাটমেন্টাল স্টোরগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।
গত ১২ মে হাইকোর্ট মান উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নি¤œমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় এবং ১০ দিনের মধ্যে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। অথচ রায়ের পর আট দিন পার হলেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জেলা সদর ও উপজেলার বাজারগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের কোন ধরনের কার্যক্রম নিতে দেখা যায়নি। যার ফলে গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুদি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এখনো এসব পণ্য দেদারসে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, বিএসটিআই সার্ভিল্যান্সের মাধ্যমে খোলা বাজার হতে বিভিন্ন পণ্যের ৪০৬টি নমুনা ক্রয় করে পরীক্ষা করে। ওই পরীক্ষায় দেশের নামী-দামী ব্র্যন্ডের পণ্যসহ ৫২টি পণ্য নি¤œমানের পাওয়া যায়। যার ফলে আদালত নি¤œমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) জনসচেতনতার লক্ষ্যে জাতীয় পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এবং তিন ধাপে ৫২টি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল/ স্থগিত করেছে। প্রথম ধাপে ১৮টি, পরে আরো ৭টি এবং সর্বশেষ গত ১৭ মে (শুক্রবার) বাকি ২৭টি পণ্যের লাইসেন্স বাতিল/ স্থগিত করে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
স্থানীয় বাজারগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অনেক দোকানি এসব পণ্য বিক্রিতে নিষিদ্ধের বিষয়টি জানেন না। অনেকে জেনেও বিক্রি করছেন। আবার অনেক ক্রেতা না জেনেও ক্রয় করছেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের পর অনেক ভোক্তা সচেতন হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে এসব নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা। যদি স্থানীয় প্রশাসন থেকে এসব পণ্যের বিষেয় প্রচার-প্রচারনাসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে ক্রেতা সাধারণ প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
এসব পণ্য তিন দিনের মধ্যে বাজার থেতে তুলে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। এমনকি বিভিন্ন পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে না নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোন হুঁশিয়ারি কাজে আসেনি।
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যগুলো বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য কোম্পানীর লোকজন আসেনি। আদৌ পণ্যগুলো ফেরৎ নেয়া হবে কিনা? এসব পণ্য কি করবেন এবং পণ্যগুলোর ক্রয় বাবদ ইনভেস্টের টাকা ফেরৎ পাবেন কিনা তা, তাদের জানা নেই।
আবার অনেক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নিষিদ্ধের বিষয়টি তারা জানেন না, তাই পণ্যগুলো বিক্রি করছেন। এ দিকে জনস্বার্থে আদালতে রায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতনমহল। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে জনসাধারণ।
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধকৃত সেই ৫২টি পণ্যগুলো হচ্ছে- তীর, জিবি, পুষ্টি ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, সান ব্র্যান্ডের চিপস, জিরা, আল সাফি, মিজান, দিঘী, আর আর ডিউ, মর্ণ ডিউ ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, প্রাণ, মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস, টেস্টি তানি তাসকিয়া ও প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশ, প্রাণ, ফ্রেস ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, এসিআই পিওর ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া, প্রাণ ও ড্যানিস ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি, পিওর হাটহাজারির মরিচের গুঁড়া, এসিআই ও মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং ব্র্যান্ডের ময়দা, রূপসা ব্র্যান্ডের দই, মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর, মেহেদি ব্র্যান্ডের বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশালের ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুঁড়া, মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, গ্রীনলেনের মধু, কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিনতীর, মদিনা, স্টারশীপ ও তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণ।
ভোক্তা অধিকার নামে সরকারি যে সংস্থাটি আছে সেটি এ বিষয়ে কোন কার্যক্রম না করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ক্যাবসহ অন্যান্যরাও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছে। ভোক্তা অধিকার নামের সরকারি সংস্থাটির নামে রয়েছে নানা অভিযোগ। তারা জনস্বার্থে কাজ না করে রহস্যজনক কারণে মাঝে-মাঝে কিছু অভিযান পরিচালনা করে।
- Home
- প্রথম পাতা
- চাঁদপুরে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হাইকোর্ট কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য!