চাঁদপুরে পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরে ৬ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। উল্টো বানের পানিতে নতুন করে চাঁদপুর সদর, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও হাইমচর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এখন পর্যন্ত জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরমধ্যে শুধু শাহরাস্তি উপজেলায় গত তিনদিনে প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
টানা বর্ষণে ফরিদগঞ্জে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, মাছের প্রজেক্ট, উঠতি ফসল ও শাক-সবজির। এদিকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম। চাঁদপুর সেচপ্রকল্পের স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নামার ব্যবস্থা করা হলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জলাবদ্ধতা হ্রাসের কোন লক্ষণ নেই।
এদিকে অতিবৃষ্টিতে পান খ্যাত হাইমচর উপজেলার কৃষকদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। পুরো উপজেলার সব কটি পানের বরজ এখন নিমজ্জিত। ৯০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভারি বর্ষণের কারণে উপজেলার প্রাথমিকের ১৯০টি এবং মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে টইটম্বুর। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও ভিতরেও পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া স্কুলের আশপাশের প্রায় সব সড়কে পানি থাকায় এবং প্রায় প্রতিটি বাড়িই পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা চাইলেই স্কুলে আসতে পারছেন না। এদিকে সরকারিভাবে ২৬টি হলেও বাস্তবে আরো বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জের কেরোয়া ও গাজীপুর এলাকার মৎস্যচাষি আ. রব, মো. ইসমাইল হোসেন সোহেল, মো. আমিন মিজি, কাউন্সিলর মো. নাজিম উদ্দিন, মো. কামাল মাল, সাইফুল ইসলামসহ অনেকে জানান, যৌথ পুঁজি বিনিয়োগ করে শতাধিক চর, পুকুর ও নদীতে মাছ চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধাতার কারণে এসব খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের দাবি সহজ ও স্বল্পশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা।
উপজেলা মৎস্য কর্মর্কতা বেলায়েত হোসেন বলেন, পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ দিলে মৎস্য চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আফতাবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের যাচ্ছেন। তবে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না, তাই পাঠদান বন্ধ রয়েছে। একই কথা বলেছেন একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্যাহ আল মামুন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর জানান, অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধাতার কারণে আমন ১২৬ হেক্টর, রোপা আমন ২৬০ হেক্টর, রোপনকৃত আমন ৩৯৫ হেক্টর, আখ ১২৮ হেক্টর, শাকসবজি ১২৫ হেক্টর ফল আক্রান্ত। বিশেষ করে শাক-সবজির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের খুবই কষ্ট হবে।
পল্লী বিদ্যুতের ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিস ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে কারণে গাছপালা উপড়ে পড়ে ১০/১২টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। অনেক জায়গায় তার ছিড়ে পড়েছে, বেশ কিছু জায়গায় খুঁটি হেলে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল বলেন, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধাতার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা যাবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্ল্যাহর দেওয়া তথ্যমতে, চাঁদপুরে ৮টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সব প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ হাজার ৭২৬ জন মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির জন্য ৪৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত। বনবাসীদের জন্য ৬৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বিশেষ করে জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪ লাখ ১০ হাজার টন চাল ও ৪ লাখ ৭০ হাজার নগদ অর্থ মজুদ আছে।

২৯ আগস্ট, ২০২৪।