চাঁদপুরে ব্যাপক আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধন


পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি, তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল বাংলার মাটিতে

………….প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


শাহ আলম খান
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ব্যাপক আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধনী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে একটি বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের স্টেডিয়াম রোড, মিশন রোড ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক হয়ে হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালসহ অন্যান্যরা।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দাউদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মো. আসাদুজ্জামানসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন।
বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের যৌথ সহযোগিতায় হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার শুরু হয়। বিকেল ৫টায় একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ক্ষণগণনা উদ্বোধনের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যে বলেন, ১০ জানুয়ারি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। যেদিন আমরা ফিরে পেলাম সেই মহান নেতাকে যিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
তিনি ‘৭২ এর ১০ জানুয়ারির স্মৃতিচারণ করে বলেন, লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল এখানে। স্বজনহারা বেদনার্ত আহত-নির্যাতিত মানুষ তাদের মহান নেতাকে ফিরে পেয়ে তাদের জীবনে যেন পূর্ণতা পেয়েছিলেন। হারাবার বেদনা যেন তারা ভুলতে চেয়েছিলেন তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পাওয়ার মধ্যদিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানীরা বাধ্য হয়েছিল জাতির পিতাকে মুক্তি দিতে। কারণ প্রায় প্রতিটি দেশের জনগণই আমাদের মুক্তিকামী জনগণের পাশে ছিল। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত সহ যে সকল দেশ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়েছিল, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল এবং জাতিসংঘে যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন তেমন সব দেশের সব জনগণের প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে পরিবারের কথা না ভেবে জাতির পিতা চলে গিয়েছিলেন রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। তাঁর প্রিয় জনগণের কাছে চলে গিয়েছিলেন’ মর্মে স্মৃতিচারন করে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের কবিতা-সাত কোটি বাঙালির যে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি, উদ্বৃত করে বলেন,‘কবিগুরু দেখে যান আপনার সাত কোটি বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে, তারা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি, তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল বাংলার মাটিতে। জাতির পিতা হত্যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে বাঙালির জীবনে যে কালো অধ্যায় নেমে এসেছিল তা যেন আর কোনদিন আসতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আজ মানুষকে উজ্জীবিত করা আড়াই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে অন্যতম হিসেবে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের একটা অন্ধকার সময় ছিল। আজ আমরা সে অন্ধকার সময় কাটিয়ে আলোর পথে যাত্রা করেছি।
সন্ধ্যা ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারের সহযোগিতায় হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত সাড়ে ৮টায় অঙ্গীকার পাদদেশে বর্ণিল আতশবাজি করা হয়।