নির্দেশনা অমান্য করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না…..জেলা প্রশাসক
ইলশেপাড় রিপোর্ট
করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়নে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশের সাথে চাঁদপুরেও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ কঠোর অবস্থানে থাকছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশাসনিক তৎপরতার মাধ্যমে জনসচেতনার পাশাপাশি যাতে কেউ ঘরের বাইরে আসতে না পারে এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ থেকে চালু হওয়া লকডাউনে কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় নামলে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
লকডাউন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ জনিয়েছেন, চাঁদপুর রেড জোন ৪০ জেলার একটি। সাথে করোনার আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। যার কারণে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে সেনাবাহিনীও সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন।
এদিকে চাঁদপুরে প্রতিনিয়ত করোনার পরীক্ষার ফলাফলের বিপরীতে আক্রান্তের হার ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে সর্বমহলে। এখন পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশ বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। তবে চাঁদপুরে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে মৃত্যুর হার কম থাকলেও আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। যার কারণে চাঁদপুরকে রেড জোন জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে বুধবার (৩০ জুন) সকাল থেকে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রশীদের নেতৃত্বে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন চলাচলের উপর নজরদারি অব্যাহত ছিলো। রিক্সা ছাড়া অন্য কোন যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। কেবলমাত্র জরুরি খাদ্যের গাড়ি প্রবেশ করতে দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাটারীচালিত অটোবাইকও জব্দ করা হয়।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি আবদুর রশীদ জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর অবস্থানের বাইরে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। তারপরও অসহায় ও দরিদ্র অটো চালকদের আমরা অনেকটাই বিনয়ের সাথে বলছি- আপনারা দরিদ্র মানুষ, আর করোনা হলো মৃত্যুময় রোগ। আগে রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। যার কারণে সরকারের ঘোষিত এই লকডাউনের ঘোষণা সবাইকেই মানতে হবে। ৭ দিন অটো বন্ধ রাখলে কোন চালকেই মারা যাবে না। তাই সুস্থ থাকলে অর্থ উপার্জন করা যাবে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, করোনার ভয়াবহতা থেকে চাঁদপুর জেলাকে সুরক্ষিত রাখতে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এজন্য লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন একযোগে কঠোর অবস্থানে থাকবে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন ধরনের শীতলতা দেখানো হবে না।
এদিকে গতকাল বুধবারও ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১শ’ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাথে ৮ হাজার ৮শ’ ২২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের তথ্য মতে এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ ৩ জনের। দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ১৩ হাজার ২শ’ ৫৮ জনের। এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিলো গতকাল।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার আজ ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধের ২১ দফার প্রজ্ঞাপন জারি করে। আজ সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের প্রজ্ঞাপনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয় ১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১১. শিল্প কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।
১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।
১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
০১ জুলাই, ২০২১।