এস এম সোহেল
করোনার অজুহাতে কয়েক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ, চিনি, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে চাঁদপুরের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। শহরের খাবারের দোকানে এরই মধ্যে খাবারের দাম বাড়াতে শুরু করছে। তবে অধিকাংশ রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু কাস্টমার হারানোর ভয়ে এখনও অনেকে খাবারের দাম বাড়াতে পারছেন না। অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় হোটেল মালিকরা প্রায় প্রতিটি খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি কোন কোন খাবারের দাম দ্বিগুণও করে ফেলেছেন। এ নিয়ে কাস্টমারদের সাথে তাদের প্রায়ই কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হোটেল ও রেস্তোরাঁর খাবারের দাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি একাধিকবার বৈঠক করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেস্তোরা মালিক সমিতি খাবার দাম বৃদ্ধিতে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে দু’একটি খাবার হোটেল ছাড়া প্রায় সব হোটেলে নিজ উদ্যোগে খাবার দাম বাড়িয়েছে মালিকরা।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, পরোটা, শিঙারা, সমুচার দাম বেড়েছে প্রতিটির ১ থেকে ২ টাকা। মিষ্টির দামও কেজিতে ২০ টাকা ও দধি কেজিতে ২০ টাকা ও রসমালাই কেজিতে ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রের চাঁদপুর হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন বেপারী জানান, করোনায় ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আগস্টের পর থেকে চাঁদপুরের ছোট-বড় প্রতিটি হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেনাবেচা শুরু করেছে। করোনার অজুহাতে কাঁচা তরকারি, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, তেল, টিস্যুসহ রেস্টুরেন্ট ব্যবসার অপরিহার্য জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমরা কী করবো, বুঝতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানান তিনি। কাস্টমার হারানোর ভয়ে এখনো খাবারের দাম এক টাকাও বাড়াননি তিনি। করোনার আগের দামে খাবার বিক্রি করছে চাঁদপুর হোটেল।
চাঁদপুর মুসলিম সুইটসের স্বত্বাধিকারী মো. মোস্তফা আখন্দ জানান, দাম কী বাড়াবো, ক্রেতাই তো নেই। দীর্ঘদিন সব কিছু বন্ধ ছিল, তখন দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। এখন আবার জিনিসপত্রের দামের এই অবস্থা। সব মিলিয়ে খুব চাপে আছি।
তিনি আরো জানান, করোনার আগে চিনির দাম ছিলো ৫০-৫৫ কেজি বর্তমানে ৮০-৮৫। ময়দা ছিলো বস্তা প্রতি ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা, বর্তমান ২১শ’ টাকা বস্তা। তেল ছিলো ১০০ থেকে ১১০ টাকা লিটার, বর্তমান ১৫০ টাকা লিটার। গ্যাস সিলিন্ডার (৩০ কেজি) প্রতি বেড়েছে ১ হাজার টাকা, দুধ ৫০-৫৫ টাকা লিটার ছিলো বর্তমান ৭০ টাকা লিটার। আমরা নিরুপায় হয়ে মিষ্টি কেজিতে ২০ টাকা, দধি কেজিতে ২০ টাকা ও রসমালাই কেজিতে ৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছি।
গত দেড় বছরে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধের কারণে মন্দ সময় পার করেছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। খাবার পার্সেল দিয়ে টিকে ছিল দু’একটি প্রতিষ্ঠান। গত দু’তিন মাস যাবৎ সব কিছু খুলে দেওয়ায় রেস্তোরাঁগুলোতে আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামে রেস্তোরাঁগুলো ফের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাবের এক প্রতিনিধি বলছে, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সব পণ্যের দামই বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের। দেশি আদার দাম ৪৮ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এর বাইরে তেল, টিস্যু থেকে শুরু করে সাবান, ডিটারজেন্ট ও বিস্কুটের দামও বেড়েছে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য বলছে, দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর মিলে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আর এগুলোতে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক কমে যাওয়ায় রেস্টুরেন্টে ভিড় বেড়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম আমাদের নতুন করে ভোগাচ্ছে। অপরদিকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়, আরেকদিকে বিভিন্ন অধিদপ্তরের অভিযান। আবার জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি- রেস্টুরেন্ট ব্যবসাই টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
১৬ নভেম্বর, ২০২১।