স্টাফ রিপোর্টার
পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় যাওয়ার সুবিধার্থে সীমিত সময়ের জন্য চাঁদপুর থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এর ফলে কাজে যোগ দিতে রোববার (১ আগস্ট) ভোর থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় লাগে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলার হাজার-হাজার যাত্রীর চাপে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় প্রতিটি লঞ্চকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঘাট ছাড়তে বাধ্য করে। তাদের সহায়তা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিক্তা খাতুনের নেতৃত্বে জেলা ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।
সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চাঁদপুর লঞ্চঘাটে অবস্থান করে দেখা গেছে, পোশাক শ্রমিকদের চেয়ে সাধারণ যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। এজন্য লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করে। এরপরও যাত্রীর চাপে সকাল ৬টার রফরফ-৭ ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে চাঁদপুর ঘাট ছাড়ে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটের সোনারতরী সকাল সাড়ে ৬টায়, সকাল ৮টার ইগল-৭ সকাল ৭টায়, সকাল ৯টার ইগল সকাল সোয়া ৭টায় চাঁদপুর ঘাট ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে যায়।
ঈগল লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আজগর অভিযোগ করেন, পোশাক শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে সরকার সীমিত সময়ের জন্য লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা তিনটি লঞ্চ ঢাকা থেকে খালি নিয়ে আসি। কিন্তু প্রশাসনিক চাপে আমাদের লঞ্চগুলো চাঁদপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যাত্রী তোলার আগেই ঘাট ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এদিকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে লঞ্চে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে অন্তত ৩০জন যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে ঢাকাগামী এমভি সোনারতরী-২ ও ইমাম হাসান লঞ্চের যাত্রীরা আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকেই চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গার্মেন্টসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার সুবিধার্থে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এ দিন সকাল থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করে। বেলা ১১ টার পর কোন লঞ্চ না থাকায় চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ চাঁদপুর লঞ্চঘাটে জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায় যাত্রীর চাপে ভেস্তে যায় স্বাস্থ্যবিধি। যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খায় বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশ সদস্যরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেখানে বাঁধভাঙা মানুষের ঢল নামে।
সিডিউলের বাইরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী-২ ও ইমাম হাসান লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে আসা মাত্রই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে উঠতে থাকে। এ সময় যাত্রীদের পায়ে পৃষ্ঠ ও লঞ্চের ঢাক্কায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়। এর মধ্যে দুই নারী ও একজন যুবক গুরুতর আহত হলে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সদর হাসনপাতালে নিয়ে যায়।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সময় কম থাকায় অনেক লঞ্চ ঘাটে আসতে পারেনি। যার কারণে অল্প কিছু লঞ্চ চাঁদপুর-ঢাকা যাতায়াত করেছে। যাত্রীর চাপ থাকায় নির্ধারিত নময়ের আগেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা আটকা পড়ে। যে পরিমাণ যাত্রী ছিল আরো ৫-৬টি লঞ্চ থাকলেও সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না। ঢাকার দু’টি লঞ্চ ঘাটে আসলে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠা শুরু করে। যার কারণে কিছু মানুষ আহত হয়েছে। তবে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী ওঠার পর লঞ্চগুলো সময়ের আগেই ঘাট ছাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরে লঞ্চগুলো যাত্রীর চাপে স্বাস্থ্যবিধি উপক্ষিত হয়েছে। যার কারণে আমরা কিছু সময় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোতে চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী নিতে দেওয়া হয়। ঘাটে লঞ্চ আসলে কার আগে কে যাবে, পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষ আহত হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভোর থেকে ঘাটে অবস্থান করছি, যাতে কোনো লঞ্চে অধিক যাত্রী না উঠতে পারেন। তাছাড়া প্রতিটি লঞ্চে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘুরে ঘুরে দেখেন, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না।
এদিকে কর্মস্থলমুখী মানুষের চাপ কমাতে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানান এক কর্মকর্তা। তবে কোন সময় পর্যন্ত চলবে সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। পোশাক কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্প-কারখানায় কাজে যোগ দিতে শ্রমিকদের পরিবহনের জন্য লঞ্চ চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল রোববার (১ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল সরকার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে বলেন, লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকবে, এমন একটি নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। সরকার যে উদ্দেশে লঞ্চ চলাচল খুলে দিয়েছে সেটা ১২টার মধ্যে পূরণ হবে না। সেজন্য সময় বাড়ানো হয়েছে।
কোন সময় পর্যন্ত চলবে- জানতে চাইলে বলেন, লঞ্চ চলবে আপাতত এটা বলতে পারি। কোন সময় পর্যন্ত চলবে সেটা এখন বলতে পারছি না। সেই সিদ্ধান্তটা আমরা এখনও পাইনি।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রোববার থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণার পর শনিবার থেকে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঈদে বাড়ি গিয়ে কঠোর বিধিনিষেধে আটকে পড়া শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সীমাহীন দুর্ভোগ সয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন।
এদিকে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যায় চাঁদপুর বাস টার্মিনালে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঢাকামুখী তেমন কোনো যাত্রী নেই।
০১ আগস্ট, ২০২১।
- Home
- চাঁদপুর
- চাঁদপুর সদর
- চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ঢল
Post navigation


