জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ করেছে পাকিস্তানের পক্ষে

চাঁদপুরে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম

স্টাফ রিপোর্টার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতারা বলছেন জামায়াতেও মুক্তিযোদ্ধা আছে। আমিও বলবো করেছে, তবে তারা পাকিস্তানের পক্ষের মুক্তিযোদ্ধা। কারণ তারা পাকিস্তানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তান। আর আমরা বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা হলাম বাংলাদেশের জনগণের পক্ষের ও এ মাটির মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এই দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে জীবনের কথা মনে ছিলো না। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাই। সেই সময় একটাই লক্ষ্য ছিলো কিভাবে শত্রুপক্ষকে পরাজিত করা যায় এবং যুদ্ধে কিভাবে জয়লাভ করবো। সেই গৌরবময় কথা আজও মনে পড়ে। চাঁদপুরে ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হলেও চট্টগ্রামে তখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বার সারাদেশের মতো বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে করে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সে সময় আমার নির্দেশে অনেক যুবক মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে। ১৯৭১ সালে একবারও ভাবেনি এদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সাথে আজ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে যে দলই করেন এই বাংলায় সেই গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আমরা ব্রিটিশ শাষনামল থেকে আন্দোলন করে গেছি। অবশেষে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে একটি স্বাধীন দেশে পেয়েছি। এই বাংলাদেশ মাটি আপনাদের কাছে অনেক কিছু আশা করে। এ মাটি আপনার আমার সবার ভূখ-। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক যুবক দেশের জন্য যুদ্ধে করে জীবন আত্মাহুতি দিলেও তার পরিবারের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে।
মেজর রফিক তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশে বলেন, আমি ন্যায়ের পথে ছিলাম, থাকবো। যত বাঁধা আসুক আমি পিছপা হব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার মৃত্যু হতে পারতো। আমার জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। গত ২ বছর আগে আমার সহধর্মিণী মারা গিয়েছেন। আমার সন্তানরা বিদেশে ও বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় রয়েছে। আমি এখন দেশ ও মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করবো। আমার একটাই লক্ষ্য এদেশে গরিব না থাকুক। আমি উঠোন বৈঠক করতে গিয়ে নারীদের কথা শুনে তাদের সমস্যা সম্পর্কে বুজতে পেরেছি। তারা আমার মন খুলে সব বলেছে, আমি আমার এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো।
তিনি বলেন, আমি এক সময় আপানাদের মত সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। সেহেতু আপনারা আমাকে আপনাদের একজন মনে করতে পারেন। আগামিতে আমার সরকার ক্ষমতায় গেলে আমি জাতীয় সংসদে নারী সমাজের বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্য সংসদে কথা বলবো। ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ উপহার দিবো এটাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রত্যেকটি মানুষ যেনো না খেয়ে না মরে ও একটি শিশুও যেনো শিক্ষা ছাড়া না থাকে এটাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকিরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাইনউদ্দিন, হাজীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল রশিদ মজুমদার, শাহরাস্তি উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিন্টু, শহরাস্তির পৌর মেয়র হাজি আব্দুল লতিফ গাজী।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক গোলাম কিবরিয়া জীবন, সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, বর্তমান সহ-সভাপতি পার্থনাথ চক্রবর্তী, সোহেল রুশদী, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক এএইচএম আসান উল্লাহ প্রমুখ।
এসময় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।