জাহেদ পারভেজ চৌধুরী একবছরে চাঁদপুরবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছেন


স্টাফ রিপোর্টার
কাজের দক্ষতায় চাঁদপুরবাসীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী। তার দক্ষতায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটের সিএনজি ও চলকদের বিশৃঙ্খলা ও পুরাণবাজারে ধান মিলের সামনে ট্রাক থামিয়ে লোড-আনলোডের কারণে যানজটের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হয়েছে। শুধুমাত্র এসব সমস্যা সমাধানই শেষ নয়, জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর দক্ষতায় অনেক বড়-বড় সমস্যা ও অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে।
জাহেদ পারভেজ চৌধুরী ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে চাঁদপুরে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানসহ বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করেছেন, যা সর্বমহলে ছিলো প্রশংসিত। গত ৬ অক্টোবর জাহেদ পারবেজ চৌধুরী চাঁদপুরে তাঁর কর্মকালের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
১ বছরে তার নেতৃত্বে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য প্রশংসিত কর্মকা-গুলোর মধ্যে ছিল- চাঁদপুর পৌরসভার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীদের সচেতনতার জন্য সভা। এতে করে শিক্ষার্থীরা না জানা অনেক তথ্য এ সভার মাধ্যমে জানতে পারেন।
পুরাণবাজারের রাস্তায় দীর্ঘদিন ট্রাক রেখে লোড-আনলোড করতেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে জনদুর্ভোগে পড়তো পুরাণবাজারবাসী। তা সমাধানের কথা চিন্তা করে জাহেদ পারভেজ চৌধুরী রাইস মিল মালিক, ট্রাক চালক-মালিক, চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিকবার সভা করেন। ফলে দীর্ঘদিনের এ সমাস্যাটি সমাধান হয়। বর্তমান পুরাণবাজার এলাকা এখন যানজটমুক্ত। এখন ট্রাকগুলো রাতে লোড-আনলোড করা হয়।
যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ, মালামাল নিয়ে টানা-হেচড়া, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল চাঁদপুর লঞ্চঘাটের সিএনজি অটোরিক্সার চালকদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ শুনতে শুনতে এর সমাধানের উদ্যেগ নেয় চাঁদপুর জেলা পুলিশ। দায়িত্ব দেয়া হয় জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে। তিনি দীর্ঘসময় পর্যবেক্ষণ করে সমাধানের জন্য জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক সমিতি, বিআইডব্লিউটিএসহ অন্যান্যদের সাথে সভা করেন। পরে উপজেলাভিত্তিক নাম উল্লেখ করে শিকল দিয়ে সিএনজি রাখার স্থান নির্ধারণ করে দেন ও ‘৯৯৯’ এ যাত্রী হয়রানী রোধে ব্যানার সাঁটিয়ে দেন। তাঁর এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে এখন আর চালককে যাত্রী খুঁজতে হয় না, যাত্রীরাই খুঁজে নিচ্ছে তার গন্তব্যের গাড়ি। এতে করে চাঁদপুরের লঞ্চঘাটে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা।
পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগবে সারাদেশ যখন এমন গুজবে উত্তাল তখন চাঁদপুরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভালো ভূমিকা রাখেন জাহেদ পারভেজ চৌধুরী। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে গুজব রটনাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুজবের বিরুদ্ধে সচেতনতা সভা করেন তিনি।
মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি প্রথম নদীতে অভিযানে নামেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ। কাজে নেমেই জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে আসে অনেক বড় সফলতা। ধরা পড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে অসাধু ব্যবসায়ীরা গরুর ঘরের সাথে গর্ত করে প্রায় ১শ’ ২৪ মন ইলিশ সংরক্ষণ। যা আর কয়েকদিন রাখতে পারলেই হয়ে যেত কোটি টাকা। কিন্তু তাঁর প্রশংসনীয় ভূমিকার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সফলতার মুখ দেখেনি। অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেদের ইট-পাটকেলের আঘাতে অভিযানের কয়েকজন আহত হলেও তাঁর নেতৃত্বে অবশেষে আসে সফলতা। পরে সংরক্ষণ করা মাছ উদ্ধার করে জনপ্রতিনিধিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, আশাপাশের জেলা থেকে চাঁদপুরের মানুষ অনেক পুলিশবান্ধব। তারা পুলিশকে অনেক সহযোগিতা করে। বিশেষ করে চাঁদপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা অনেক আন্তরিক। তাদের সাথে কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে আমরা সর্বদা বদ্ধপরিকর। চাঁদপুর একটি শান্তিপ্রিয় জেলা। ইতোমধ্যে মাদক, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যধি ও গুজবের বিষয় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুনামের সাথে কাজ করেছে। ভবিষতে এ ধারা অব্যহত থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কমিউনিটি পুলিশিং ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় কাজ শুরু করেছি। আগামিতে সবার সহযোগিতা নিয়ে চাঁদপুরকে একটি সু-শৃঙ্খল জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সবাই মনে রাখবেন পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ।
উল্লেখ্য, জাহেদ পারভেজ চৌধুরী পুলিশে যোগ দেন ২৭তম বিসিএস’র মাধ্যমে। প্রথম পোস্টিং ঢাকা এয়ারপোর্ট ব্যাটালিয়ন এ। ঐ সময়ে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লন্ডন মেট্টোপলিটন পুলিশের SO ১৮ ইউনিট এর আমন্ত্রণে হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে লন্ডন যান। তারপর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান দারফুর, সুদানে এক বছর। এরপর স্টাফ অফিসার টু অতিরিক্ত আইজিপি এপিবিএন হিসেবে কাজ করেন এক বছর। এরপর আমেরিকান এম্বেসি ও আমেরিকা সরকারের সহায়তায় SWAT I CRT ev Critical Response Team এর কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে চীনে এক মাসের সরকারি সফরে যান। তারপর বাংলাদেশ সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিখ্যাত ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটি তে master of international securitz studies এ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেড় বছর সিডনিতে অবস্থান করেন। সেখান থেকে এসেই চাঁদপুরে বদলি হন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে জাহেদ পারভেজ চৌধুরী প্রায় তিন বছর বিশ্বখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী নেসলেতে চাকরি করেছেন গুলশান প্রধান কার্যালয়ে।

০৮ অক্টোবর, ২০১৯।