ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ৭ম সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ চ্যান্সেলর এওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন। -ইল্শেপাড়

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, এমপি। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য এবং আদর্শ জাতি গঠনে নৈতিক শিক্ষা খুবই জরুরি, যা অর্জনে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। মন্ত্রী গত বুধবার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এর ৭ম সমাবর্তনে ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে গবেষণার মাধ্যমে নতুন তথ্য ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম সমাবর্তনে যোগ দিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রকল্প কৃষিভিত্তিক প্রসেসড ফুডসের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতেও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অবদান রাখছে। এসময় তিনি বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর এসোসিয়েশনের সাথে এমওইউ স্বাক্ষর করায় ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের শিক্ষকদের গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যেতে পারছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে এরকম পদক্ষেপ সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। সবাই আমাদের সন্তান এবং তাদের সবার জন্যই আমরা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও তাদের ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ ছাড়া তারা আর কোন পথ খোলা নেই। এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে জনকল্যাণে, সেবার মনোভাব ও শিক্ষার জন্য অবদান রাখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ঢাকার আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবর্তনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস’র সভাপতি এবং জর্জিয়ার ককেসাস ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ড. কাখা শিঙ্গেলিয়া, ডিআইইউ ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম এবং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান ও বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা কাখা সিঙ্গেলিয়ার বলেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর উন্নয়ন নির্ভর করছে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর, আর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কাজই করছে। এজন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমাদের আরও বেশি বেশি প্রয়োজন। আমাদের মানবসম্পদকে আরও বেশি বেশি দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটরা অত্যন্ত দক্ষ। তারা তাদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কাখা সিঙ্গেলিয়া বলেন, তোমরা এখন জীবনযুদ্ধে প্রবেশ করতে যাচ্ছো। এই যুদ্ধে সফল হতে হলে তোমাদের কিছু স্বতন্ত্র কৌশল অবলম্বন করতে হবে। প্রথমতঃ তোমার জীবনের একটি সুচিন্তিত লক্ষ্য থাকতে হবে। দ্বিতীয়তঃ একজন স্বশাসিত শিক্ষার্থীর মতো তোমাকে সারাজীবন ধরে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তৃতীয়তঃ সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং চতুর্থতঃ জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায়ী হতে হবে। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে হলে বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যেতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজের আইডিয়া ও কাজকর্ম প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করতে হবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়ার সংখ্যা অনেকটা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। পাঠদান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাথমিক কাজ। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানদ-ে উপনীত হতে গেলে তাকে গবেষণা কার্যক্রমে গুরুত্ব প্রদান করতে হয়। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মূলত সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয় যা আমাদের কাম্য নয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে একটি মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও এর পরিচিতি রয়েছে। এজন্য আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরিবারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, বর্তমানে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই বাজারমুখী কোর্স চালু করার প্রতি অধিক আগ্রহী। এমন আগ্রহ কোন অবস্থাতেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ও দর্শনই হওয়া উচিত দেশের যুব সমাজকে এমন জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তোলা যাতে তারা ভবিষ্যতে শুধু দেশের যোগ্য নাগরিকই নয় বরং দেশের সর্ব ক্ষেত্রের নেতৃত্ব হাতে তুলে নিতে পারে। তিনি আরো বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের গবেষণার প্রতি উৎসাহিত করা। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ বলে আমার বিশ্বাস।
সমাবর্তনে ৩৪৯৮ জন নবীন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করেন। এবারের সমাবর্তনে পঁচ জন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। এরা হলেন পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের সাদিয়া আফরোজ, পঙ্কজ কুমার সাহা, তামাতুন ইসলাম তানহা, ইটিই বিভাগের মোহাম্মদ জাকারিয়া ভূইয়া, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ইপসা আনিকা ও সিএসই ডিপার্টমেন্টের মো. রিয়াজুর রহমান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১৫ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রী সমাবর্তন শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিআইইউ ১৭ টি বিভাগে ২৫০০০ শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন প্রদান করে।