ত্যাগ ও উৎসর্গের মহিমায় চাঁদপুরে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত


এস এম সোহেল
ত্যাগ ও উৎসর্গের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার্থে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা চাঁদপুরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়েছে। সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি দিয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। আর যাদের সামর্থ নেই তাদেরও এই ঈদ-আনন্দের কোনো কমতি ছিলো না। ধনীদের কোরবানির মাংসে গরিবদের যে অধিকার রয়েছে, সে প্রাপ্য তারা পেয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। এভাবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছাসে জেলাবাসী ঈদ উদ্যাপন করেছে।
গত সোমবার ছিলো মুসলমানদের ২য় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। চাঁদপুর জেলা শহরের প্রধান ঈদের জামাত বরাবরের মতো এবারো চাঁদপুর পৌর ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো সকাল পৌনে ৮টায়। নামাজের আগে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাড. ইকবাল বিন বাশার, মসজিদ কমিটির আলহাজ ফারুকুল ইসলাম।
ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন হাজি শরীয়াত উল্লাহ্ (রহ.) এর ৭ম পুরুষ ও বাহাদুরপুরের পীর আলহাজ মাও. আব্দুল্লাহ্ মোহাম্মাদ হাসান। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহ ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব মানুষের উন্নতি, সমৃদ্ধি, সুখ, শান্তি এবং আখেরাতের নাজাত ও মুক্তি কামনা করে মহান আল্লাহ তাল্লার দরবারে মোনাজাত করা হয়। ঈদের জামাত শেষে চলে কোলাকুলি আর সৌহার্দ্য বিনিময়।
এখানে নামাজ আদায় করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, বি এম হান্নানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গ নামাজ আদায় করেন।
হজ ও কোরবানির স্মৃতিকে ধারণ করে মুসলিম উম্মাহর এই ধর্মীয় উৎসব। যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে তারা পবিত্র মক্কা-মদিনায় গিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) সহ অন্য নবীগণের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ এবং বায়তুল্লাহ শরীফ ও নবীজীর রওজা মোবারক জিয়ারতের মধ্য দিয়ে হজ পালন করে থাকেন। হজের পরদিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ হচ্ছে ঈদুল আজহা। বাংলাদেশে জিলহজের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে এ বছর ১০ জিলহজ ছিলো ২২ আগস্ট। ইসলামের বিধান মতে, যাদের ওপর হজ ফরজ হয়নি, তারা পবিত্র মক্কা-মদিনায় না যেতে পারলেও তাকবীর পাঠের মধ্য দিয়ে হজের মতো একটি মহাপূণ্য কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছে।
পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ উদ্যাপন করতে চাঁদপুরের মানুষ যারা জেলার বাইরে কর্মস্থলে ছিলেন তারা ছুটে এসেছেন আপনালয়ে। যাতায়াতে তেমন কোনো দুর্ঘটনা এবং বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি-ঘরে আসতে পারায় মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেছে। যারা কোরবানি দিয়েছেন তারা বেশি খুশি এবার কোরবানির পশু বিশেষ করে গরুর দাম সহনশীল হওয়ায়। ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য দলে দলে ঈদগাহের দিকে ছুটতে থাকে। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। এক কালেমার পরিচয়ে সবাই একাকার হয়ে গেছে ঈদগাহে। সবাই কাতারবন্দী হয়ে দু’রাকাত ঈদুল আজহার ওয়াজিব নামাজ আদায় করে খুতবাহ পাঠ শেষে দোয়া ও মুনাজাত করে যার যার বাড়ি-ঘরে ফিরে আসেন। তবে নামাজ শেষে অনেকেই আপনজনদের কবর জিয়ারত করে এই পবিত্র দিনের ফজিলতে তাদেরকে শামিল করে তাদের জন্যে মাগফিরাত কামনা করেন। বাড়িতে এসে সবাই পশু কোরবানিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কোরবানি শেষে গোস্ত নিজেদের জন্যে রেখে আত্মীয়-স্বজন, গরিব ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করে দেন। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ও আধাসরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
এবছর ঈদে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকায় সব ঈদগার এন্তেজামিয়া কমিটি ঈদের জামাত পাশ্ববর্তী মসজিদগুলোতে আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ঈদের দিন বৃষ্টি না হওয়ায় প্রায় সবাই ঈদগা ময়দানেই ঈদের জামাত আদায় করে। সব ঈদ জামাতেই নামাজ ও মুনাজাত শেষে সবাই একে অপরের সাথে আলিঙ্গন করেছে। ঈদ মুসলিম বিশ্বের জন্য এক আনন্দঘন উৎসব। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করে শিশু বৃদ্ধ সবাই শামিল হয়। ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করেন একে অপরের সঙ্গে। মুহূর্তে গোটা এলাকা সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়। দোয়া ও মোনাজাত করেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃৃদ্ধি কামনার অঙ্গীকারে। সব শত্রুতা ও বৈরিতা ভুলে যেনো সৃষ্টি হয় এক স্বর্গীয় পরিবেশ, সামনের দিনগুলোও যেনো ঈদের মতো হয় এ কামনা ছিলো সবার। শহরের বড় বড় মসজিদ, পাড়া মহল্লার মসজিদেও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় প্রত্যেক ঈদগাহে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশ ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্কাউটস সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখেছে।
ঈদে প্রত্যেক বাড়িতে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, গরুর গোস্ত, কোরমা ও পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার। রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকে বিশেষ খাবারের আয়োজন।
এ দিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দ ভাগভাগি করে নেন। তাই শান্তিপূর্ণ ও সৌহাদ্যপূর্ণ সমাজ গঠনে ঈদুল আজহা আবেদন চিরন্তন। ঈদুল আজহা শিক্ষা আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।

১৫ আগস্ট, ২০১৯।