সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের ১১ মাস পর
মতলব দক্ষিণ ব্যুরো
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র, মতলব প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ মল্লিকের ভায়রার ছেলে সিয়াম (১৪) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ১১ মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি..রাজেউন)। গত শনিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সিয়ামের মৃত্যু হয়।
সিয়াম খাদেরগাঁও ইউনিয়নের নাগদা গ্রামের মোস্তফা কামাল প্রধানের ছেলে। তার বাবা কুমিল্লার লাকশাম ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান পদে চাকরি করেন। মৃত্যুকালে সিয়াম বাবা, মা, ১ ভাই ও ১ বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
রোববার (৯ জুলাই) সকাল ৯টায় পশ্চিম নাগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরহুম সিয়ামের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার আগে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন সাবেক মেম্বার মো. আব্দুর রাজ্জাক, পশ্চিম নাগাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আক্তার হোসেন ও মরহুমের পক্ষ থেকে তার খালু সাংবাদিক মাহফুজ মল্লিক। জানাযায় ইমামতি করেন মরহুম সিয়ামের চাচাত ভাই হাফেজ মাওলানা হাবিব প্রধান।
সিয়ামের খালু সাংবাদিক মাহফুজ মল্লিক বলেন, ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট বিকালে বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে ধনারপাড় যাওয়ার সময় নাগদা বিদ্যুতের সাব স্টেশনের কাছে বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি মালবাহী ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিয়ামের মাথায় আঘাত লেগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। স্থানীয় লোকজন সিয়ামকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণা করে। পরে সিয়ামকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ওই হাসপাতালেও সিয়ামের চিকিৎসা করতে রাজী হয়নি। রাত সাড়ে ১২টায় মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দেড় লক্ষ টাকা চুক্তি ভিত্তিতে মাথার অপারেশন করা হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা সফল অপারেশনের পর ব্রিগেডিয়ার প্রফেসর ডা. আব্দুল হাই মানিক জানান, সিয়ামের মাথায় অতিরিক্ত আঘাতের কারণে মাথার হার ৩ টুকরো হয়ে গেছে। যা কোন অবস্থায় লাগানো সম্ভব হবে না। পরে মাথার হাড় ছাড়াই সেলাই করে দেয়া হয়। ওই হাসপাতালে ৩দিন আইসিসিতে থাকার পর পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও নুরুল আমিন রুহুল এমপির প্রচেষ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিও বিভাগে ভর্তি করানো হয় সিয়ামকে। সেখানে ৩ মাস চিকিৎসা সেবার পর উন্নতি না হওয়ায় সিয়ামকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে ২ মাস সেবাযতেœর ফলে সিয়ামের শারিরীক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয় এবং জ্ঞান ফিরে আসে এবং ‘আল্লাহ’ বলা শুরু সিয়াম। ৩ মাস পর মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার প্রফেসর ডা. আব্দুল হাই মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে ওনার পরামর্শ মোতাবেক সিয়ামের মাথায় কৃত্রিম হার লাগানোর জন্য আবারও ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে হার লাগানোর পর ১৫ দিন পর সিয়ামকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে ১৫ দিন থাকার পর সিয়ামের মাথায় কৃত্রিম যে হার লাগানো হয়েছে সেখানে পানি জমে ইনফেকশন হয়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মাথায় হার লাগানো ডা. আব্দুল হাই মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ওই হাসপাতাল থেকে বদলী হয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে চলে গেছেন। এদিকে সিয়ামের মাথার এ সমস্যা সারার জন্য ওনার সাথে বহু চেষ্টা করা হলেও তিনি বলেন, এটা আপনাদের এলাকার হাসপাতালে করতে পারবেন। সিয়ামকে নিয়ে চাঁদপুর ও কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কোন ডাক্তার সিয়ামের মাথার সেলাই কাটা ও পানি সরানোর বিষয়ে কেউই রাজী হননি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সিয়ামকে। সেখানেও ঈদুল আজহার আগে অপারেশন করার কথা বলে তা করানো হয় ঈদের পর। গত সোমবার সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টা করে সফলভাবে সিয়ামের মাথার অপারেশন করা হয়। হঠাৎ করে ওইদিন রাতে সিয়ামের অবস্থা খারাপ হওয়া ১দিন পর আবারও এজটি অপারেশন করা হয়। পরে তাকে আইসিওতে রাখা হয়। শনিবার বিকাল ৩ টায় হঠাৎ করে সিয়ামের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। লাইফ সাপোর্ট দেয়ার পর রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সিয়ামকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
১০ জুলাই, ২০২৩।