মতলব উত্তরে রোপা আমন কাটায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি

মনিরুল ইসলাম মনির
বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি।
মতলব উত্তর উপজেলায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রোপা আমন ধান কাটা। কৃষকের পদভারে মুখরিত জেলার পথ-প্রান্তর, মাঠ-ঘাট। যে দিকেই তাকাই, কৃষক-কৃষাণীরা সোনালি ধান কাটছেন, টানছেন, মাড়াই করছেন, আবার কেউবা ঝাড়ছেন। সবমিলিয়ে এখন কোনো কৃষকের দম ফেলার সময় নেই। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও রপ্তানী করা হয় এ প্রকল্পে উৎপাদিত ধান। এই বছরের শুরু থেকে আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা অধিক হারে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন।
মাঠজুড়ে কৃষকের রক্তঝরা সোনালি রোপা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। ভোর থেকে শুরু করে অর্ধেক রাত পর্যন্ত চলে এই ঐতিহ্যবাহী ধান কাটার কাজ। কৃষকরা মনের সুখে ভাটিয়ালি, জারি ও বারসিয়া গান গেয়ে ধান কাটেন। সারা দিন রোদে পুড়ে ধান কাটেন আর রাতভর সেই ধান মাড়াই করে গৃহস্থের গোলা ভর্তি করেন। এই ধান কাটাকে ঘিরে প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে বিরাজ করছে ব্যস্ততম পরিবেশ। প্রতিটি পরিবারের ছোট-বড় সবাই নতুন ধান তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গৃহিণীরা রান্না করছেন, কেউবা নতুন ধান শুকাচ্ছেন, কৃষকেরা মাঠ থেকে ধান বয়ে আনছেন আবার বাড়ির উঠানে সেই ধান মাড়াই করছেন এভাবে প্রতিটি পরিবারের মাঝে এখন যেন দম নেয়ার সময় নেই। আর মাঠজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ যেদিকে তাকাই, শুধু সোনালি ধান আর ধান। যেন সবুজের মাঝে স্বর্ণের সমারোহ।
তাই আমিও বলতে চাই, মতলব উত্তরে বুকজুড়ে জন্ম নিয়েছে কৃষকের স্বপ্নের সেই সোনালি ধান, যার মাঝেই রয়েছে কৃষকের প্রাণ। মাঠের এপাশ-ওপাশ যে দিকেই তাকাই, দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষকেরা মাথায় গামছা বেঁধে হাতে কাঁচি নিয়ে দলবেঁধে কাটছেন সোনালি ধান আর গাইছেন কৃষকের সেই ভাটিয়ালি, জারি ও বারসিয়া গান, শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সালাউদ্দিন বলেন, এ উপজেলার আমন চাষিরা বেশ খুশি। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।