বাবুরহাট এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন
‘মরণ নেশা ইয়াবা সেবন করা অবস্থায় চারজনকে আটক করলো জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অথচ কোর্টে চালান দিলো তিনজনকে। বাবুরহাট এলাকার মাদকের মূলহোতাকেই ছেড়ে দেয়া হলো কী কারণে বা কীসের বিনিময়ে?’ গত দু’দিন যাবৎ এমন প্রশ্ন এবং গুঞ্জন চলছে পুরো বাবুরহাট এলাকায়। মাদকসহ আটক হওয়ার পরও মূলহোতা বিপ্লব মালকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না এলাকার লোকজন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাবুরহাট এলাকার সচেতন লোকজন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা ডিবি পুলিশের এসআই মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে ডিবির একটি টিম বাবুরহাট বাজারস্থ মান্নান মালের বাড়িতে অভিযান চালায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশ দীর্ঘ প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক (ইয়াবা)সহ ৪ জনকে আটক করে। তাদেরকে বাবুরহাট থেকে চাঁদপুর সুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আটকরা হচ্ছে- মেশকাত মাহবুব বিপ্লব মাল (পিতা মান্নান মাল), মো. নজরুল ইসলাম জঙ্গু (পিতা রিয়াজুল ইসলাম), মো. ইব্রাহীম প্রধানীয়া (পিতা মৃত শাহজাহান প্রধানীয়া) ও মো. সাঈদ মিজি (পিতা মো. জাহাঙ্গীর মিজি)।
বাবুরহাটের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মান্নান মালের ছেলে বিপ্লব মাল দীর্ঘদিন যাবৎ পুলিশের নজরে না আসা এবং আটক না হওয়ায় এলাকায় মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বিপ্লব মাল মাদকসহ আটক হওয়ার খবর বাবুরহাট বাজারসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করে। আটকের এ খবর সে রাতেই স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছলে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি পুলিশের) অফিসার ইনচার্জকে এ বিষয়ে ফোন করলে তিনি বাবুরহাট বাজার এলাকা থেকে মাদকসহ আটকের ঘটনা নিশ্চিত করেন এবং বলেন শীঘ্রই তাদের নামসহ প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হলে অর্থাৎ শুক্রবার সকালে জানা যায়, ৪জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হলেও ৩ জনকে রেখে চিহ্নিত ১জন মাদক ব্যবাসয়ীকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেনো মাদকসহ আটকের পর ৩জনকে রেখে ১জনকে ছেড়ে দেয়া হলো এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে এবং বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন চলতে থাকে বাবুরহাটজুড়ে।
এদিকে ওসি ডিবি পুলিশ, চাঁদপুর নামক ফেইসবুক আইডি থেকে প্রকাশ করা হয়, চাঁদপুর পুলিশ সুপার সাহেবের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. মামুনুর রশিদ সরকার মামুন ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদক ব্যবসায়ী (১) মো. নজরুল ইসলাম প্রকাশ জঙ্গু (৩৫), পিতা রিয়াজুল ইসলাম, মাতা জাহেদা বেগম, সাং-রাজারগাঁও (বেপারী বাড়ি) থানা-হাজীগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর, (২) মো. ইব্রাহীম প্রধানীয়া (২৮) পিতা-মৃত শাহজাহান প্রধানীয়া, মাতা-রোকেয়া বেগম, সাং- উত্তর আশিকাটি (প্রধানিয়া বাড়ি) ওয়ার্ড নং-১৪ থানা ও জেলা-চাঁদপুর, (৩) মো. সাঈদ মিজি (২০) পিতা- মো. জাহাঙ্গীর মিজি, মাতা- শিপন বেগম, সাং-বাহের খলিশাডুলি (মিজি বাড়ি) ওয়ার্ড নং-১৩ পৌরসভা থানা ও জেলা-চাঁদপুরদের গ্রেফতার করেন এবং তাদের কাছ থেকে ১৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে জব্দ করেন। এ পোস্টটি দেখে মানুষ হতবাক হয়ে যায়। তখন প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ মাদকের মূলহোতা বিপ্লব মালকেই ছেড়ে দিলো! এদিকে গত বৃহস্পতিবার চারজনকে আটকের পর রাতে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, বাবুরহাট থেকে ৪ জন নয়, ৩ জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিপ্লব নামে কাউকে আটক করা হয়নি।
অপরদিকে বিপ্লব মালের এক নিকটাত্মীয়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিপ্লবকে বাবুরহাট থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নিচতলায় ডিবি অফিস থেকে তার বাবা মান্নান মাল ও কয়েকজনসহ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে আনে। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাবুরহাট বাজারের একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিপ্লবকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাতেই তাকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটক অন্যদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বিপ্লব মালসহ তারা সবাই একসাথে বসে ইয়াবা সেবনকালে তাদের আটক করে ডিবি পুলিশ। তারা আরো জানায়, উদ্ধারকৃত ইয়াবাগুলো বিপ্লব মালের কাছেই ছিল।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাবুরহাট থেকে চারজন নয়, তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বিপ্লব নামে কাউকে আটক করা হয়নি। আপনারা হয়ত ভুল শুনেছেন। এ বিষয়ে তিনি আরো যুক্তি দেখান, আটক তিনজনকে ওই বাড়ি থেকে হাঁটিয়ে নিয়ে আনা হয়। তখন সাথে তো উৎসুক আরো অনেকেই ছিলো। তাই বলে কি সবাই আটক হয়েছে?
এবিষয়ে পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির বলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক বাবুরহাট থেকে বিপ্লব মালকে আটকের ঘটনা তদন্ত করে প্রমাণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।