ইল্শেপাড় ডেস্ক
পবিত্র মাহে রমজানের আজ চতুর্দশ দিবস। রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাত বা মুক্তিলাভের দিনগুলো একে একে চলে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। এই মাহে রমজান বা সিয়াম সাধনার মাসের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। ভাষাগত দিক থেকে তাকওয়া আরবি ভাষার ওয়াকিউন শব্দ থেকে এসেছে। এই ওয়াকিউন শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা বা বেঁচে থাকা। এর অপর একটি অর্থ হচ্ছে ভয় করা। কারণ যেসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়, সেগুলো ভয় করারও বিষয়। কোন কিছু হতে বিরত থাকা। রক্ষা করা অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
কাজেই শুরুতেই তাকওয়ার ব্যাখ্যা এভাবেও দেওয়া যায় যে, আপনি একটি পথে হাঁটছেন যার দু’পাশ কাঁটাযুক্ত বৃক্ষে পরিপূর্ণ। এই পথে হাঁটার সময় আপনার পরনের পোশাক কাঁটায় আটকে যাওয়ার বহু প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এই কাটাময় পথে চলার সময় পোশাক কাঁটা থেকে বাঁচিয়ে চলার যে প্রচেষ্টা তাকওয়া বিষয়টি সে রকম। অর্থাৎ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে বা ডিঙ্গিয়ে সঠিক, সুন্দর ও নিরাপদে চলার প্রচেষ্টা।
ইসলামী পরিভাষায় তাকওয়া হলো আল্লাহ ভীতি। ইসলামী বিধান মতে তাকওয়া হলো আল্লাহ সম্পর্কে ব্যক্তির আত্মিক অনুভূতি। প্রতিপালন সম্পর্কে সতর্কতা, আল্লাহকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করা, তার শরণ নেয়া। সর্বদা আল্লাহর উপস্থিতি এবং তার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে সতর্কতা। এসব বোঁধ-অনুভূতি ব্যক্তিকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সৎ ও ভালো কাজে ব্রতী করে তুলবে। এটাই হলো তাকওয়া।
পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরানের ১০২ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন ঃ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় কর। আর অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। তাকওয়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো কুফর ও শিরক থেকে বেঁচে থাকা। দ্বিতীয় স্তর হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকা। তৃতীয় স্তরটি হলো তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর। অন্তরকে আল্লাহ ব্যতীত সব কিছু থেকে বিরত রাখা এবং আল্লাহর স্মরণ ও শরণ এবং তার সন্তুষ্টি কামনার দ্বারা অন্তরকে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ রাখাই হচ্ছে এই স্তরের বৈশিষ্ট্য।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাকওয়ার হক হলো সকল কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করা, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কখনো অকৃতজ্ঞ না হওয়া। মহান আল্লাহর কাছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাপকাঠি হলো তাকওয়া। তাকওয়ার গুণাবলীতেই মানুষের গুরুত্ব মূল্যায়ন করা হয়। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যার তাকওয়া রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া।
এই সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল করীমের সুরা হুজুরাতের ১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে মানব সমাজ আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।
আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ঠ মুত্তাকী হওয়ার তওফীক দান করুন। আমীন!
- Home
- শিক্ষা ও সাহিত্য
- মাহে রমজানের সওগাত