খাল দখল করে মাছ চাষকে দায়ী করছেন স্থানীয় কৃষকরা
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজিসহ রবি শস্যে বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গাছ উপড়ে পড়ে কয়েকটি বসতঘর ভেঙেছে এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের ক্যাবল (তার) ছিঁড়ে পড়ায় অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে মিধিলার প্রভাবে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিধিলির প্রভাবে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি এবং শুক্রবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং দুপুর থেকে ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। এতে শীতকালীন সবজিসহ রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও বাকিলা ইউনিয়ন ও পৌরসভার কৃষকরা। কারণ, উপজেলার এই দুই অঞ্চলে বেশিরভাগ শাক-সবজির চাষ হয়ে থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর, উচ্চঙ্গা ও পৌরসভাধীন বলাখাল শ্রীনারায়ণপুর, দক্ষিণ বলাখাল, বাকিলা ইউনিয়নের সন্না, গোগরা ও শ্রীপুর মাঠে সবজির জমিগুলোতে বৃষ্টির পানি আটকে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই জমিগুলোতে চাষ করা লাউ, মিস্টি কুমড়া, শসা, খীরা, লাল শাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবিজ বিনষ্ট হয়েছে। এজন্য খালে বাঁধ দিয়ে যারা মাছ চাষ করছেন তাদের দ্বাীয় করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, শ্রীনারায়নপুর খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালি দেলোয়ার মাস্টার, রতন, কামাল, জাকিরসহ কয়েকজন মাছ চাষ করেন। এতে ওই খাল দিয়ে শ্রীনারায়নপুর মাঠ ও বলাখাল মাঠের পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমাদের শত কোটি টাকার সবজি ক্ষতিগ্রস্ত (বিনষ্ট) হয়।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ৬৮৫ হেক্টর জামিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টন। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি গাছ নষ্ট হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিছু বিজতলা সব মিলিয়ে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমির সবজি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, শ্রীনারায়নপুর খালে বাঁধ দিয়ে প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি করে প্রতি বছর প্রভাবশালীরা মাছে চাষ করার কারণে আজ কৃষক পথে বসেছে। এই মাঠে প্রায় এক/দেড়শ কানি জমিনের সবজি নষ্ট গেছে।
বলাখাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন বলনে, ৫ একর জমিতে লাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, খীরা ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
সরেজমিন পরিদর্শনকারী উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শ্রীনারায়নপুর ও বলাখাল মাঠে কৃষকের প্রায় কোটি টাকার সবজি নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, আমি একটি কর্মশালায় রয়েছি। তাই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠ পরিদর্শন করে বলাখাল ও শ্রীনারায়নপুর খালের বাঁধ কেটে পয়নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের সাথে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি কেউ খালের বাঁধা কাটতে বাঁধা দেয় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দখলকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামে গাছ উপড়ে পড়ে কয়েকটি বসতঘর ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের ক্যাবল (তার) ছিঁড়ে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে এই সংবাদ লিখা পর্যন্ত উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।
২০ নভেম্বর, ২০২৩।