আমরা ট্রেনিং করি ঐতিহাসিক পলাশীর আম্রকানন মাঠে
……কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ মজুমদার
স্টাফ রিপোর্টার
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ কাহিনী নিয়ে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম মহাসচিব ও যুদ্ধকালীন নৌ-কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ মজুদার।
তিনি তার স্মৃতিচারণে বলেন, আমরা ট্রেনিং করি ভারতের ঐতিহাসিক পলাশীর আম্রকানন মাঠে। আমি যেহেতু নৌ কমান্ডো ছিলাম তাই জল পথের ট্রেনিং করেছি পলাশী মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঐতিহাসিক ভাগীরতী নদীতে। আমাদের যে মাইন দেওয়া হয়েছিল তার ওজন ছিল ৫ কেজি। ভারতীয় নৌবাহিনী চেকোস্লোভাকিয়া থেকে জাহাজ বিধংসী মাইন আনে। আমরা ইন্ডিয়ান নৌ বাহিনীর আন্ডারে ছিলাম, আমাদের কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না। আমাদেরকে বলা হতো লেভেল কমান্ডো। আমরা গোপনীয় বাহিনী হওয়ায় আমাদের যুদ্ধের ইতিহাসও গোপন রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিভিন্ন ধরনের গানের কথা বলা হয়েছিল। সে নির্দিষ্ট গানের কথাগুলো শুনে আমরা একই সময়ে চারটি স্থানে আক্রমন করেছিলাম। অপারেশন জেকপট নামে খ্যাত আমাদের সে হামলা। ভারতের কলকাতার রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গানের মধ্যদিয়ে আপারেশন চালানোর সময় নির্ধারণ করা হতো।
তিনি আরো বলেন, আমরা ৩১০ জনের টিম ভারতে ট্রেনিংয়ে যাই। এর মধ্যে ১৮ জন সুইসাইড স্কোয়ারে যেতে রাজি না হওয়ায় তাদের কে অন্যত্র টেনিংএর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের কে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন সমুদ্র ও নদী বন্দর এলাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা বুকে মাইন বেঁধে পাকিস্তানি দের যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস করার জন্য আমরা নেমে পরি।ভারত থেকে মাইন এনে দেয়া হয়। সেই মাইনে ৬ টি করে মেঘনেট থাকতো। আমরা সেই মাইন বুকে বেঁধে দ্রুত গতিতে সাঁতরাতে পারতাম। পানি নরতো না। মনে হতো যেন কচুরি পানা ভেসে যাচ্ছে।আমরা তা পাকিস্তানিদের জাহাজে গিয়ে লাগিয়ে দিতাম। মাইন গুলোতে রাবারের কভার লাগানো ছিল।আমরা ৩ জন সেদিন অয়েল ট্যান্কারে অপারেশন করি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী পথে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আসতো। তাই আমরা নদী বন্দরে থাকা জাহাজগুলো ডুবিয়ে দেই। চাঁদপুর শহরের আইডব্লিউটি মোড়ে পাকিস্তানি জাহাজ ডুবিয়ে দেই। পরবর্তিতে সিলেটের কুসিয়ারা নদীতে ফেরী ডুবিয়ে দেই। প্রজন্ম জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধা কি, তারা কেন যুদ্ধ করেছে তা জানতে হবে। আমরা বেঁচে থাকবো সে আশায় মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করতে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সে দিনের ভাষণ শুনে আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম।
সহকারী কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মহসিন পাঠানের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মাস্টারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সোহেব আলী।
১৯ ডিসেম্বর, ২০২১।