রফতানি বৃদ্ধিতে আরও তৎপর হোন

ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক উত্তরণের সুযোগ গ্রহণ করে রফতানি ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে সুযোগটা পেয়েছি তাতে আমাদের ঋণগ্রহণের সুবিধা হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হবে।

রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রফতানি ট্রফি ২০১৫-১৬ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

স্বাগত বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য ও খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের জন্য ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ প্রদান করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিশাল সুযোগ আমাদের সৃষ্টি হবে রফতানি বাণিজ্য করার, সেই সুযোগটা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আর তার উপযুক্ত পরিবেশ সৃৃষ্টি করতে হবে। এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে অন্য যে সুযোগগুলো আমরা পাই সেগুলো হয়তো পাব না, তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ সেভাবেই আমরা আমাদের নীতিমালাসহ সবকিছু প্রণয়ন করেছি। দল-মত নির্বিশেষে তার দরজা ব্যবসায়ীদের জন্য সবসময় খোলা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশ-বিদেশে যান, খুঁজে বের করুন কোন দেশে আমাদের দেশের কোন কোন পণ্য রফতানি করা যায়।

তিনি বলেন, বাজার খুঁজে নেয়া এবং পণ্য তৈরি করা- সেটাও কিন্তু আপনাদের একটা দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে যদি কোনোরকম সহযোগিতা লাগে, অবশ্যই সরকার হিসেবে আমরা তা করব।

আসন্ন নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যদিও সময় সীমিত। আগামীতে ইলেকশন, কী হবে বলতে পারি না! যতক্ষণ আছি ততক্ষণে যা যা প্রয়োজন সেটা করে দিতে পারব, সেটুকু কথা দিতে পারি। তবে আমরা যে সিস্টেম করে রেখেছি, এরপর যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, কেউ দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে পারবে না। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে আর কেউ থামাতে পারবে না।

রফতানি বাণিজ্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অব্যাহতভাবে রফতানিতে উচ্চ-প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৫-০৬ সালে যেখানে রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৭-১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

তিনি বলেন, রফতানি খাতে গতিশীলতা আনয়ন ও রফতানি বাণিজ্যে শিল্পকে প্রতিযোগিতা-সক্ষম করার লক্ষ্যে আমরা রফতানি নীতি ২০১৮-২১ প্রণয়ন করেছি।

শিল্পায়ন ছাড়া কোনো জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি হয় না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইপিজেড তৈরি করা হচ্ছে। সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। ইপিজেড ও বিসিক স্টেটগুলোকে পুরোপুরি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বাংলাদেশ যাতে উন্নত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সব সময় চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমার সরকার ব্যবসা করবে না। ব্যবসা করবেন ব্যবসায়ীরা। আমরা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করব। আমরা আপনাদের সৃজনশীল প্রয়াসে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। সরকারে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যটা যাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হয়, সে ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫টি পণ্যে ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা প্রদান এবং রফতানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সংস্থান করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে অনেকে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, জিএসপি সুবিধা দিয়েছে। আমি এটুকু দাবি করতে পারি, যেখানেই আলাপ করেছি সঙ্গে সঙ্গে সুযোগগুলো পেয়ে গেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, দেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার লাভের বিষয়টি তুলে ধরেছি। এর ফলে আমরা চিলি, ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার লাভ করেছি। জাপান ও রাশিয়ায় জিএসপি সুবিধার পরিধি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। বাজার বহুমুখী করার জন্য ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে রফতানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েরা তো এখন বেশি এগিয়ে এসেছে। তাই আরও ভালোভাবে শিক্ষিত করে, ট্রেনিং দিয়ে একটা শক্তিশালী জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে দেশকে আরও উন্নত করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা ছিল। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন এলএনজি আমদানি শুরু করে দিয়েছি। ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল করব, যাতে গ্যাসের আর কোনো সমস্যা কোথাও না থাকে; যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সুবিধা হয়।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত। আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প তার ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে তার সরকারের প্রচেষ্টাগুলো তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ- সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।