শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদী অপরিকল্পিত খনন বন্ধের দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন

 

কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
শাহরাস্তিতে ধোপল্লা-মোপল্লা গ্রামের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে নদী খনন বন্ধ এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। নদী খননের ফলে কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকায় শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে ধোপাল্লা গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের খোদ্দ ব্রিজ হতে ধোপল্লা ব্রিজ পর্যন্ত ধোপল্লা ও মোপল্লা গ্রামের কৃষিজমি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ডাকাতিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে নদী খনন ও বালু বিক্রির বিরুদ্ধে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠিত সমাবেশে এলাকার কয়েকশ’ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, গত কয়েক দশকে ডাকাতিয়া নদী ভাঙনের ফলে প্রায় দুই হাজার একর কৃষি জমি হারিয়েছে এই মাঠের কৃষকেরা। সম্প্রতি নদী খননের নামে কৃষকদের বুক খনন করার পাঁয়তারায় মেতে উঠেছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী দালালরা। এতে করে হাজার হাজার একর রেকর্ডকৃত আবাদি ও ফসলি জমি হারিয়ে যাবে। ফলে পথে বসে যাবে এই অঞ্চলের অসহায় কৃষকরা।
তারা বলেন, আমরা নদী খননকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কৃষকদের সাথে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা না করে এবং অপরিকল্পিত এবং অন্যায়ভাবে নদী খনন করার কারণে অনেক পরিবার ভূমিহীন হয়ে পড়বে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অন্যায় অযৌক্তিকভাবে নদী খনন বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা কৃষকরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে কিছু সুবিধাবাদী-অসাধুচক্র হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের বলছি, হুমকি দিয়ে সাধারণ মানুষদের থামানো যাবে না। জমি রক্ষায় ড্রেজিং বন্ধে কৃষকরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
কৃষক মাকছুদুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কৃষক মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, দেলোয়ার হোসেন মাস্টার, বিল্লাল হোসেন মাস্টার, রফিকুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম বাচ্চু, মো. অলি উল্যাহ্ প্রমুখ।
মানববন্ধনে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, কৃষক আব্দুস সাত্তারের ৯০ শতাংশ, আব্দুল হকের ৭২ শতাংশ, আবুল কালাম শেখের ১২০ শতাংশ, আবুল খায়েরের ৭২ শতাংশ, আনোয়ার হোসেনের ৩০ শতাংশ, লাল মিয়ার ৩৬ শতাংশ, রুহুল আমিনের ৩০ শতাংশের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন। এভাবেই প্রায় শতাধিক কৃষক রয়েছে, যাদের পুরো কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া আব্দুল কাদেরের ১০৮ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ, নাজির আহমেদের ৪২ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ, জহিরুল ইসলামের ৩৬ শতাংশের মধ্যে ১২ শতাংশ, আবদুল মতিনের ৫৪ শতাংশের মধ্যে ২৪ শতাংশ গোলাম মোস্তফার ১৮ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ জমি রয়েছে। বাকি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে তাদের মধ্যে শতাধিক কৃষক রয়েছেন, যাদের কৃষি জমির অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এভাবেই নদীর উত্তর পাশে থাকা সকল কৃষকের জমিগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। কারণ ডাকাতিয়া নদীটি দিন দিন উত্তর দিকে ভাঙছে আর দক্ষিণ দিকে গড়ছে। এতে করে উত্তর পাশে অর্থাৎ শাহারাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ের কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর দক্ষিণ পাশে অর্থাৎ হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
এখন যদি নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা হয় তাহলে নদী আগের চেয়ে খুব বেশি ভাঙতে থাকবে। ফলে টামটা উত্তর ইউনিয়নের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নদী খনন বন্ধের দাবিতে তারা স্থানীয় সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বিআইডব্লিউটিএ, কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
উল্লেখ্য, নদী খনন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মৌনতা কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাকছুদুল ইসলাম জানান, নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত অনুমতি আমাদের কাছে রয়েছে। কেউ যদি দেখতে চায়, আমরা তাকে দেখাবো।
৩০ জানুয়ারি, ২০২১।