শাহরাস্তি ব্যুরো
শাহরাস্তিতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না থাকায় সিলগালা করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতটি পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ান চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নাসির উদ্দীন, শাহরাস্তি থানার এসআই মো. মহসিন ভূঁইয়া, নূরুল আনোয়ার।
জানা যায়, উপজেলার মেহের কালীবাড়িতে মা ও শিশু হাসপাতালটি পরিচালনায় রয়েছেন ফয়েজ আহমেদ মিলন, তানিয়া আক্তার। তারা ডাক্তার না হয়েও ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ বছর অবৈধভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের অদক্ষতা ও অবহেলা জনিত কারণে বেশ কয়েকজন প্রসূতি মা এবং নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনায় বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী পরিবার উক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি আর্থিকভাবে প্রাথমিক ধামাচাপা দিলেও অন্যান্য বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্দেশিত আইন অবমাননা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গেলে হাসপাতালের এমডি তোফায়েল হোসেন তপু সংবাদকর্মীকে হুমকি প্রদর্শন করে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন ডাক্তার পরিচয় দেয়া ফয়েজ আহমেদ মিলন অপর এক গণমাধ্যম কর্মীকে ভুয়া সাংবাদিক বলে অপমান করে। হাসপাতালটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট লক্ষ করা যায়। যা বেশির ভাগই নেতিবাচক।
হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স মেয়াদীত্তীর্ণ এবং নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়নি, ডিউটিরত ডাক্তার নেই, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স নেই, ফ্রিজে রিএজেন্টের সাথে রান্না করা মাংস রাখা হয়েছে, এক্সরে মেশিন অকেজো ও নাইট্রাস অক্সাইড, হ্যালোথেন গ্যাস নেই, অপারেশন থিয়েটারে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, হরমোন টেস্ট এর মেশিন নেই, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড নেই, অটোক্লেভ মিটার নেই। ফলে মোবাইল কোর্টের তফসিলভুক্ত আইন ২০০৯-এর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২০০৯-এর ২৭ ধারা মোতাবেক ০৩/২০২৪ নং মামলায় এই রায় কার্যকর করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, উপজেলার সর্বত্র নিয়মিত অভিযান চলবে এবং ত্রুটিযুক্ত, অনিয়ম ও অনুমোদনহীন সকল প্রকার ল্যাব, ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নাসির উদ্দীন বলেন, স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা দিয়ে কোনো হাসপাতাল চলতে পারে না। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া যায় না। এরই আওতায় মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে সিলগালা ও কর্তৃপক্ষকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪।