শাহরাস্তিতে লাশ নিয়ে আর্তনাদ

শাহরাস্তি ব্যুরো
শাহরাস্তিতে ঘরের বাইরে মায়ের লাশ তালা মেরে ঢুকতে দেয়নি প্রবাসীর স্ত্রী। নিজ ঘরেই বিতাড়িত হন বাবা। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের দৈল বাড়ি গ্রামের প্রধানিয়া বাড়িতে।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমানের ছোট সন্তান মো. মীর হোসেন প্রবাসে থাকেন। গত রোববার তার মা চাঁদপুরে মারা যায়। পরদিন সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি আসলে মীর হোসেনের স্ত্রী আফসানা আক্তার শ্বশুরকে ঘরে প্রবেশ করতে না দিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঘরের ভিতর অবস্থান করে।
বাড়ির আশেপাশের লোকজন ঘটনাটি শুনে এগিয়ে আসলে আফসানা কারো কথা না শুনে ঘর বন্ধ রাখে। এতে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে শাহরাস্তি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খায়রুল আলম ঘটনাস্থলে আসেন এবং একই সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক দর্জি উপস্থিত হন। ঘটনা মীমাংসা করবে বলে স্থানীয়দের জানালে তারা শান্ত হন।
হাবিবুর রহমানের ৪ ছেলে। হাবিবুর রহমান একমাত্র টিপ সই ছাড়া পড়ালেখা জানে না। তার মধ্যে ছোট ছেলে মীর হোসেন ২০১৫ সালে বাবা হাবিবুর রহমান হতে ৩ শতক ভূমি দাবি করে। সন্তানের কথা অনুযায়ী বাবা হাবিবুর রহমান ৩ তিন শতক সম্পত্তি হেবা দলিলমূলে দান করেন।
অক্ষর জ্ঞানহীনতার সুযোগে ছোট ছেলে মীর হোসেন বাবার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লিখে নেয়। এ ঘটনার কিছুদিন যাওয়ার পর অপর তিন সন্তান ঘটনাটি জানতে পারে। এ ব্যাপারে ছোট সন্তানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতি করার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নিষ্পত্তির জন্য ছোট ছেলে মীর হোসেন বাবার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে পুনরায় বাবাকে ২৩ শতক সম্পত্তি দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ফেরত দেয়।
মীর হোসেন দলিল দিলেও বাবা ও মাকে ঘরে স্থান না দিয়ে তাদের বেদম মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর এমন নির্যাতনের কথা শুনে অপর সন্তানরা বাবা-মাকে চাঁদপুরে নিয়ে আশ্রয় দেয়।
এর মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে মায়ের মৃত্যু হলে গতকাল সোমবার সন্তানরা বাবসহ মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি আসলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সন্তানের প্রতারণার শিকার মায়ের লাশ ঘরের বাইরে রেখে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর দাফন শেষে অসহায় বাবা হাবিবুর রহমান (৮০) বাড়ি ছেড়ে অজানা স্থানে চলে যান।

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩।