আবু মুছা আল শিহাব
শাহরাস্তিতে স্কুলের টয়লেট থেকে ১০ ঘণ্টা পর ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়ি গেলেও বিদ্যালয়ের টয়লেটে আটকা পড়েছিল বাক প্রতিবন্ধী শারমিন। সে বাক্ প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাইরে থেকে তালা লাগানোর সময় কেউ কিছু টের পায়নি। পথচারী এক তরুণ বাড়ি যাবার সময় দেখতে তাকে পেয়ে রাত ১০টার পর স্কুলের টয়লেটের তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, শারমিন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পার্শ্ববর্তী কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর দক্ষিণ পাড়া হাজী বাড়ির আনোয়ার হোসেনের মেয়ে সে। বাক প্রতিবন্ধী শারমিন আক্তার বেলা সাড়ে ১২টায় বিদ্যালয় ছুটির পর টয়লেটে প্রবেশ করে। প্রাকৃতিক কাজ সেরে বের হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দিয়ে চলে যান। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কাউকে ডাকতে পারেনি শারমিন। ছুটির পর বাড়ি না ফেরায় শারমিনের বাবা, তার সহপাঠী ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজখবর করতে শুরু করেন।
এদিকে রাত ১০টার পর পাশের স্বর্ণকার পাড়ার আল-আমিন নামের এক তরুণ স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোনের আলোতে টয়লেটের ভেন্টিলেটরে একটি হাত দেখতে পান। তিনি ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে বিষয়টি জানান।
পরে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে গিয়ে তালা ভেঙে ওই ছাত্রীকে টয়লেট থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার শেষে স্থানীয় আবুল কাশেম তার বাড়িতে ওই ছাত্রীকে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক সেবা দেন। উদ্ধারের পর ছাত্রীর বাবাকে খবর দিলে তিনি মেয়ের জন্য সেখানে ছুটে আসেন।
স্কুলটির আয়া শাহানারা বলেন, বিদ্যালয় সাড়ে ১২টায় ছুটির পর তিনি ৪টায় টয়লেটে তালা লাগিয়ে দেন। তবে এ সময় ভেতরে তিনি কাউকে দেখেননি।
শারমিনের বাবা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অজানা শঙ্কা নিয়ে মেয়েকে খুঁজেছি। বিদ্যালয় ছুটির পর শারমিন বাড়ি না ফেরায় সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি। আমার মেয়ে বারবার লোকজন ডাকার চেষ্টা করতে গিয়ে তার গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমীর হোসেন জানান, তিনি বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়ে ছিলেন। বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এমন কিছু তার নজরে পড়েনি। রাতে ফোনে ঘটনা জানতে পেরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ওই ছাত্রীর বাড়ি পাঠান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, আমি ঘটনা জেনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান উল্যাহ চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১।