শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির চাঁদপুরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ

প্রাচীনতম শহর রক্ষায় অবশ্যই মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিতে হবে
……….শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি

এস এম সোহেল
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, সারাদেশে করোনাকালীন এই সময়ে হসপিটাল, অক্সিজেন, টিকাসহ স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যাপক অর্থ ব্যয় হয়েছে। সরকার চাচ্ছে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে এসে ঝুঁকিমুক্ত করে তুলতে। মাস্টার প্ল্যানিং ছাড়া কোনো কাজ হবে না। সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন কাজ করছেন। চাঁদপুরে পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন ও সব বিভাগীয় প্রশাসনের সাথে একটি সুন্দর সমন্বয় রয়েছে। এর সাথে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হলে চাঁদপুরে আরো ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এই প্রাচীনতম শহর রক্ষায় আমাদের অবশ্যই মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়ককে ৪ লেনে রূপান্তর করতে প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
তিনি শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, করোনাকালীন সময়ে দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষামন্ত্রী চাঁদপুরে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও প্রত্যেকটি কাজের সাথেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে সবসময় পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তার পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতায় চাঁদপুরের এই দুর্যোগ পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. নাছিম আখতার, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত হোসেন, ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান, নৌ-পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রকিবুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত জামিল, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস সিভিল স্টেশন কমান্ডার সাইদুল ইসলাম, পিপি অ্যাড. রনজিত রায় চৌধুরী।
সভার শুরুতেই চাঁদপুরের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরন দাস, চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এসএম কিবরিয়া জামান, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমান, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেনেন্ট সাদিক হোসেন, এনএসআই’র উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি’র গতকাল শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো: সকালে মৈশাদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মুখলেছুর রহমান মিয়াজীর বাড়িতে সমবেদনা জ্ঞাপন ও কবর জিয়ারত। বিকেলে চাঁদপুর পৌরসভায় পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে মতবিনিময়। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে ক্যান্সার/কিডনী রোগীদের মাঝে সমাজসেবা বিভাগের চেক বিতরণ করেন। সন্ধ্যায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি সকালে চাঁদপুরস্থ রামপুরে নিজ বাসভবনে উপস্থিতি ও কবর জিয়ারত করেন। এরপর মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও কুমারডুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ বর্ধিত করা হয়েছিল। আমরা আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে আমরা আবারও বসবো। বিশ^বিদ্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল নেয়। আমরা উপাচার্যদের সাথে কথা বলেছি, তারা চেয়েছে অন্তত প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন প্রথম ডোজ টিক নেয়, তাহলে ভাল হয়। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম অক্টোবরের মাঝমাঝি। এখন আবার উনাদের সাথে কথা বলব, উনারা যদি এর আগে কিংবা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে একই সময় খুলতে চায় খুলবে অথবা উনারা যদি অন্য কোন তারিখ নির্ধারণ করেন, সেটা উনাদের বিষয়।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আপনারা জানেন গতকাল আমাদের জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে সভা করেছি। আগামি ৫ সেপ্টেম্বর আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা রয়েছে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এমনকি স্কুল খুলে দেবার পরে দৈনিক একটি প্রতিবেদন প্রেরণেরও বিষয় রয়েছে। যেন আমরা খুব কঠিনভাবে মনিটরিং করতে পারি। যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি সবাই মেনে চলে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আওতায় থাকবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারির টিকাদান ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আঠারো বছরের বেশি যাদের বয়স তাদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা। এখন বলেছেন ১২ উপরে যারা তাদেরও টিকা দেয়ার কাজটি শুরু করবে। আবার সব টিকা ১২-১৮ বছর বয়সীদের দেয়া যায় না অর্থাৎ ১২-১৮ বছর বয়সীদের যে টিকা দেয়া যায়, সেই টিকা নিয়ে আসছে এবং আনার ব্যবস্থা করছে। আমরা সেগুলোও পর্যায়ক্রমে দিবো। তবে আমরা আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিবো।
ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কিনা তা দেখতে হবে। এই কাজটি শুধুমাত্র শিক্ষামন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই কাজটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা জানি, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৭ মাস বন্ধ ছিল, তার সুফল আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশে সংক্রমণ সেভাবে বাড়েনি। এদিকে ভাল হলেও আমাদের দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকসহ নানা ধরনের সমস্যাও আছে। এগুলোর উভয়দিক বিবেচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সিদ্ধান্ত আমরা এখন নিচ্ছি, যেহেতু সংক্রমণের হার এখন কমে যাচ্ছে এবং দ্রুতই কমছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বিকেলে সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত ও একই স্থানে দুঃস্থদের মাঝে টিন বিতরণ করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বাগান উদ্বোধন করেন। বিকেল ৬টায় বড়স্টেশন মোলহেডস্থ বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্রে পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সাথে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুরের পৌর মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউনুছ বিশ্বাস, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, আবিদা সুলতানা, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মৎস্য ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ, চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ, হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১।